কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সহিংসতায় টেক্সটাইল খাতের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা এই ক্ষতি কাটিয়ে...
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সহিংসতায় টেক্সটাইল খাতের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ চান এবং উল্লেখ করেছেন যে, এই স্বল্প সুদের ঋণ তারা আগামী এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে পারবেন। এই সহায়তা পেলে তারা সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে পৃথক চিঠি পাঠিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো এই চিঠির একটি অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের কাছেও পাঠানো হয়। বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন চিঠিতে সই করেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে প্রায় দুই সপ্তাহের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ বস্ত্র কারখানা বন্ধ ছিল। এতে রপ্তানি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রপ্তানি আদেশ বাতিল, উৎপাদন হ্রাস, শ্রমিকদের অনুপস্থিতি এবং কাঁচামাল সংকটে কারখানার মালিকরা কঠিন সময় পার করছেন। এ অবস্থায় গত জুলাই মাসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের সময় এসে গেছে।
কারখানাগুলোর মালিকরা উল্লেখ করেছেন, বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চলতি মাসের বেতন পরিশোধে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদে এক বছর মেয়াদে ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও, জুলাই মাসের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্যও একই সুদহারে একই মেয়াদে ঋণ প্রদান করা হলে বস্ত্র ও পোশাক খাতের মালিকরা উপকৃত হবেন। চিঠিতে এই সহায়তাকে প্রণোদনা হিসেবে নয়, বরং ঋণ সহায়তা হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ করা হয়েছে, যা ধারাবাহিকভাবে এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
স্বল্প সুদে ঋণের আবেদনের পাশাপাশি বর্তমান ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখার দাবি করেছে বিটিএমএ। চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্রমাগত লোকসানের মুখে থাকা রপ্তানিমুখী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য বর্তমানে মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায়, সব মেয়াদি ঋণ ছয় মাসের জন্য সুদমুক্ত করে কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে সরবরাহকৃত সুতা ও কাপড়ের বিপরীতে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট এলসি প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে বিল গ্রহণ করেছে, তা যথাসময়ে পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এই বিলের অর্থ পাওয়া গেলে সদস্য কারখানাগুলো কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় চলতি পুঁজির সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।
বিটিএমএ চিঠিতে আশা প্রকাশ করেছে যে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প চালু রাখাই তাদের মূল লক্ষ্য।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমান সংকটের বাইরে, বস্ত্র খাত আগে থেকেই সংকটের মধ্যে ছিল। কভিড-১৯-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করেছে। এর ফলে বস্ত্র খাতের রপ্তানি আদেশ ক্রমাগত কমছে।
অভ্যন্তরীণ কিছু কারণও উৎপাদন ব্যাহত করছে। গ্যাস সংকট, প্রায় ২৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকদের ৭০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, গৃহীত বিল পরিশোধ না হওয়া, চলতি পুঁজির ঘাটতি এবং তুলা ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খুলতে ব্যাংকের অনীহা, এবং নগদ সহায়তা কমানো– এসব কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমছে।
এসব পরিস্থিতির কারণে শিল্পের উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"