শ্রীমঙ্গল, যা চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে পর্যটকদের অভাবে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। দেশের চলমান অস্থিরতার কারণে এখানকার পর্যটনশিল্প ব্...
শ্রীমঙ্গল, যা চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে পর্যটকদের অভাবে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। দেশের চলমান অস্থিরতার কারণে এখানকার পর্যটনশিল্প ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
শ্রীমঙ্গলের হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, খাবারের হোটেল, এবং পর্যটকদের জন্য থাকা কেনাকাটার দোকানগুলোতে এখন কেমন যেন এক শুনশান অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে পর্যটকদের দেখা মিলছে না, যা পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে। পর্যটন ব্যবসায় চলছে মন্দাভাব, ফলে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।
গত শনিবার (২৭ জুলাই) শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ জায়গায় কোনো পর্যটক নেই। জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোও দেশি কিংবা বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি থেকে বঞ্চিত। শহরের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজগুলো সম্পূর্ণ খালি পড়ে আছে। বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের উপস্থিতি ছাড়াই নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
সূত্রের তথ্যমতে, কারফিউ জারির পর কিছু পর্যটক শ্রীমঙ্গলে আটকা পড়েছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সীমিত আকারে ব্যাংক ও যানবাহন চালু হলে তারা শ্রীমঙ্গল ত্যাগ করতে পেরেছেন, বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
মৌলভীবাজার, দেশের অন্যতম পর্যটনসমৃদ্ধ জেলা, যেখানে শ্রীমঙ্গল সবচেয়ে পরিচিত একটি স্থান। বিভিন্ন ধরনের যাতায়াতের সুবিধার কারণে পর্যটকরা শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে মৌলভীবাজারের অন্যান্য উপজেলাগুলোর পর্যটন স্পট ভ্রমণ করে থাকেন। এ জেলার আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম ঝরনা, হাইল হাওর-বাইক্কা বিল, এবং চা বাগানের মনোরম দৃশ্যাবলী।
ইকোট্যুর গাইড শ্যামল দেববর্মা বলেন, গত বছরগুলোতে এই সময় শ্রীমঙ্গলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রচণ্ড ভিড় থাকত। হোটেল-মোটেলে কোনো সিট খালি পাওয়া যেত না। বিশেষ করে, প্রতি বছর এই সময় শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো দেশ-বিদেশের নানা বয়সী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকত। তবে, দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এসব স্পটে এখন পর্যটকদের দেখা মিলছে না, যা ট্যুর অপারেটরদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়েছে।
পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের এই সময় থেকেই চায়ের রাজ্যে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। কিন্তু হরতাল ও অবরোধের কারণে সব বুকিং বাতিল করতে হয়েছে তাদের।
চামুং রেস্টুরেন্টের মালিক তাপস দাশ জানান, তাদের ব্যবসা মূলত পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটক না আসলে প্রতিদিন লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। কারফিউ জারির পর থেকেই রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে হয়েছে। যদিও রেস্টুরেন্ট বন্ধ, তবুও প্রতিদিন কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলসহ অন্যান্য খরচ বহন করতে হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অনেক পর্যটক তাদের বুকিং বাতিল করেছেন। এর ফলে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি পরিস্থিতি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে পর্যটন খাত ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
সূত্রে জানা যায়, কারফিউ জারির আগের কয়েকদিনে কিছু পর্যটক শ্রীমঙ্গলে ছিলেন। কিন্তু ১৮ তারিখের পর থেকে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তারাও ফিরে যান। ছাত্র আন্দোলনের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায়, বিদেশি পর্যটকদের আগমনও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ব্যবস্থাপক শাহিন আহমেদ জানান, সাধারণত এই সময়ে উদ্যানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ দেশি-বিদেশি পর্যটক আসতেন, যা থেকে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে সরকারের আয় হতো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন সেখানে মাত্র সাত থেকে আটজন পর্যটক আসছেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, এই মৌসুমে সাধারণত হাজার হাজার পর্যটকের ভিড় থাকত, যা এখন নেই বললেই চলে। সাধারণ ছুটি ও কারফিউর কারণে পর্যটকদের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"