Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

মোদির সাথেই থাকছেন শেখ হাসিনা, ভারতের সরকার নীতি কী বলছে

  শেখ হাসিনা আপাতত দিল্লিতে অবস্থান করছেন, ভারতের আশ্রয় নীতিতে কোনো আপত্তি নেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাতত কিছুদিনের জন্...


মোদির সাথেই থাকছেন শেখ হাসিনা, ভারতের সরকার নীতি কী বলছে

 

শেখ হাসিনা আপাতত দিল্লিতে অবস্থান করছেন, ভারতের আশ্রয় নীতিতে কোনো আপত্তি নেই
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাতত কিছুদিনের জন্য ভারতে অবস্থান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর যুক্তরাজ্য যাওয়ার পরিকল্পনায় কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এমন তথ্য জানিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।


গত সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশের সহিংস বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।


শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বোনও রয়েছেন, যাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যরা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে যুক্তরাজ্যের অভিবাসনবিধি অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পরেই তার আশ্রয়ের আবেদন বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়া, শেখ হাসিনার কাছে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসাও নেই।


ভারতের সরকার যদিও কোনো নির্দিষ্ট আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে না, তবুও তারা শেখ হাসিনাকে থাকার অনুমতি দিয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে সরকারি নীতির অনুপস্থিতি নিয়ে অতীতেও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারতে প্রবেশের পর এই প্রশ্ন আবারও সামনে আসে।


আশ্রয়প্রার্থী/শরণার্থী কী?

১৯৫১ সালের জাতিসংঘের কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের প্রটোকল অনুসারে, শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হন সেই ব্যক্তি, যিনি নিজ দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন। এই ব্যক্তিরা সাধারণত জাতিগত, ধর্মীয়, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ, বা রাজনৈতিক মতামতের কারণে নির্যাতনের আশঙ্কায় নিজ দেশে ফিরে যেতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক।


রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিরাও এই সংজ্ঞার আওতায় শরণার্থী হতে পারেন।জাতিসংঘের মতে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক দমন অভিযানের পর রোহিঙ্গাদের পলায়ন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজার বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থীশিবিরে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমার দাবি করে, রোহিঙ্গারা মূলত বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী, যদিও তারা মিয়ানমারে শতাব্দী ধরে বসবাস করে আসছে।


ভারতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৪০,000। তবে এই বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট নয় ভারত সরকার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারকে (ইউএনএইচসিআর) কিছু রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই ও পরিচয়পত্র দেওয়ার অনুমতি দিলেও, ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে জনসাধারণ ও রাজনৈতিক মহলে তাদের দ্রুত ‘বহিষ্কার’ করার দাবি উঠেছে, যা সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ বিভিন্ন আশঙ্কা থেকে উদ্ভূত।


ভারত ও জাতিসংঘের সনদ

ভারত অতীতে শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, যেখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিব্বতি, বাংলাদেশের চাকমা, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার উদ্বাস্তুরা অন্তর্ভুক্ত। তবে ভারত ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী সনদ বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী নয় এবং দেশটির কোনো শরণার্থী নীতি বা আইনও নেই।


এ কারণে শরণার্থী প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের হাতে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা খোলা থাকে। সরকার যে কোনো শরণার্থীকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ঘোষণা করতে পারে, যেমনটি রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। যদিও ইউএনএইচসিআর তাদের যাচাই করেছে, ভারত সরকার বিদেশি সম্পর্কিত আইন বা ভারতীয় পাসপোর্ট আইনের আওতায় তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


শরণার্থীবিষয়ক নীতির ক্ষেত্রে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি হলো নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (২০১৯), যা ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানকে সীমিত করেছে।


নির্বাসন এবং নন-রিফুলমেন্ট নীতি


২০২১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের সেই যুক্তি মেনে নেয় যে, রোহিঙ্গারা ভারতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অবস্থান করছে। তখন আদালত জম্মুর আটকশিবিরে আটক থাকা প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা সদস্যের মুক্তির আদেশ দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তাঁদের নির্বাসনের জন্য ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়। 


তবে, নির্বাসনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এর একটি উদাহরণ হলো ২০২১ সালে আসাম সরকার এক ১৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা কিশোরীকে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছিল, যা ব্যর্থ হয়। কিশোরীটি ২০১৯ সালে আসামে আটক হয় এবং তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও মিয়ানমার তাকে গ্রহণ করেনি। আইনগত নির্বাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাউকে পুশ-ব্যাক বা জোর করে ফেরত পাঠানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই সেই ব্যক্তিকে তার নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।


বাংলাদেশ বহু বছর ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে, তবে ভারত কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। যদিও ভারত তাদের ‘অবৈধ’ হিসেবে বিবেচনা করছে, বাংলাদেশ তাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।


ভারত যখন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে, তখন এটি ‘নন-রিফুলমেন্ট’ নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। এই নীতি অনুযায়ী, কোনো শরণার্থীকে এমন দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না, যেখানে তার নিপীড়নের ঝুঁকি রয়েছে। আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ভারত এই নীতি মানতে বাধ্য।


ভারত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে ভিন্নভাবে আচরণ করে থাকে, যা শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়। তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার শিবিরে অবস্থানরত তামিল শরণার্থীদের ভাতা প্রদান করে, তাদের চাকরি খুঁজতে সুযোগ দেয় এবং সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়। 


২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের পর ভারত স্বেচ্ছা-প্রত্যাবাসন পদ্ধতি প্রয়োগ করে, যেখানে শরণার্থীরা নিজেরাই ইউএনএইচসিআর-এর মতো সংস্থার পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেয় যে, দেশে ফেরা নিরাপদ কি না। এই প্রক্রিয়া ‘নন-রিফুলমেন্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


ইউএনএইচসিআর বলছে, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং প্রত্যাবর্তনকারীদের সহায়তা করাই তাদের অগ্রাধিকার। মূল দেশের দায়িত্ব হলো এই পুনর্মিলনের প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রদান।






সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "