দেশের ৮টি জেলা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে, যেখানে মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখ-কষ্টের নানা দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে প...
দেশের ৮টি জেলা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে, যেখানে মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখ-কষ্টের নানা দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ ছবি সবার দৃষ্টি কেড়েছে, যেখানে একটি শিশুকে বন্যার পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এই সাদাকালো ছবিটি কোনো আলোকচিত্রীর তোলা নয়।
আসলে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন এআই ইমেজ ডিটেক্টর, যেমন- IsItAI.com এবং HiveModeration.com, টুলগুলোতে ছবিটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি এআই দিয়েই তৈরি।
তবে, ছবিটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছবিটি শেয়ার করেছেন। কেউ শিশুটির সন্ধান চেয়েছেন, কেউবা ঘটনাস্থলের তথ্য জানতে চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ ছবিটি ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে, সমকাল ছবিটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেছে যে এটি এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি।
ছবিটি নিয়ে এএফপির ফ্যাক্ট-চেকার কদরুদ্দিন শিশির তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, "কোনো ইমেজ এআই দ্বারা তৈরি করা হয়েছে কিনা, তা শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলার জন্য এখনও কোনো টুল নেই। এসব টুলের ফলাফলকে কেবল সমর্থনকারী প্রমাণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। আমি তিনটি এআই ডিটেক্টর টুলে এই ছবিটি পরীক্ষা করেছি এবং তিনটি ভিন্ন ফলাফল পেয়েছি। একটি টুল ছবিটিকে ৯১ শতাংশ এআই জেনারেটেড দেখিয়েছে, অন্যটি ৪০ শতাংশ এবং আরেকটি দেখিয়েছে 'সম্ভাব্যত মানুষ দ্বারা তৈরি'।
তিনি আরও বলেন, "যদি ছবিটির মূল সংস্করণ পাওয়া যেত, তাহলে হয়তো এই ভিন্নতর ফলাফল পাওয়া যেত না। সাধারণত, কোনো এআই-জেনারেটেড ছবির মূল সংস্করণ টুল দিয়ে চেক করলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া যায়। যদি কোনো ছবি একাধিক টুলে ৭০ শতাংশের বেশি এআই-জেনারেটেড হিসাবে শনাক্ত হয়, আমরা সেটিকে নিশ্চিত ফলাফল হিসেবে গ্রহণ করি। তবে এই ছবির ক্ষেত্রে, কেবল টুলের ওপর নির্ভর করে এআই জেনারেটেড কিনা তা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কদরুদ্দিন শিশির পরামর্শ দেন, ছবিটি বিশ্লেষণের জন্য আরও কিছু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, "ছবিটি গতকাল (বুধবার) থেকে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু গতকালের আগে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর বাইরে কোথাও এটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবং এটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ছবিটি কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফারের ক্যামেরা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ধরা যাক, এটি ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলের চলমান বন্যার একটি ছবি। এ ক্ষেত্রে ছবিটির মূল্য অনেক বেশি হওয়ার কথা। যদি কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফার এই ছবি তুলতেন, তবে তিনি নিশ্চিতভাবেই ঘটনাটির গুরুত্বের কারণে এটি তার কাজের প্রতিষ্ঠান বা যে কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতেন। ফ্রিল্যান্সার হলেও, ছবিটি তিনি একটি উচ্চ মূল্যে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিক্রি করতেন। অর্থাৎ, শুধুমাত্র ফেসবুকে এই ছবিটি পাওয়া কিছুটা অস্বাভাবিক। ছবিটি প্রথমে কোনো সংবাদমাধ্যম বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ক্রেডিট ও ক্যাপশনসহ প্রকাশিত হওয়ার পর ফেসবুকে আসার কথা ছিল। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে তা হয়নি।
যদি ছবিটি কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফার তার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করতেন, তবে এমন একটি হৃদয়স্পর্শী ছবিতে সাধারণত তার নাম বা প্রতিষ্ঠানের নামের ওয়াটারমার্ক দেখা যেত। কিন্তু ছবিটির কোনো সংস্করণে এমন কিছু নেই।
ছোট শিশুটি যেভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে, তাতে বোঝা যায় যে, ফটোগ্রাফার খুবই কাছাকাছি ছিলেন এবং তার পক্ষে এই অবস্থায় একাধিক ছবি বা ভিডিও তোলার সুযোগ থাকা উচিত ছিল। তবে অনলাইনে এই একটি সূত্রহীন ছবি ছাড়া এ ঘটনার অন্য কোনো কোণ থেকে তোলা ছবি বা ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে না।
ছবিতে একটি উন্মুক্ত পানি-ভর্তি এলাকায় ২/৩ বছরের শিশুটিকে অভিভাবক ছাড়া দেখা যাচ্ছে, যা অসম্ভব নয়, তবে খুবই অস্বাভাবিক। এছাড়া, শিশুটির ঠোঁটের গঠনও কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তার মুখে আতঙ্কের কারণে চোখ ও কপালের একপাশে যে ভাঁজ পড়েছে (যা সাধারণত কপালের মাঝখানে দেখা যায়), তা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া মনে হয় না। সব মিলিয়ে বলা যায়, ছবিটি প্রকৃত কোনো ঘটনার না হয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সারাদেশে বন্যার কারণে ৮ জেলার ৩৫৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন দুজন—একজন ফেনীতে এবং আরেকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"