ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে ভিপিএন, হলো এমন একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা যা ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভার্চুয়াল টানেলের সাহ...
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে ভিপিএন, হলো এমন একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা যা ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভার্চুয়াল টানেলের সাহায্যে অন্য এক বা একাধিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বাড়ানো এবং অপ্রবেশযোগ্য কনটেন্ট দেখার জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিপিএন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ইন্টারনেটের মূল উদ্দেশ্য ছিল তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা।
নব্বইয়ের দশকে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভিপিএনের আবির্ভাব ঘটে। যদিও ভিপিএন মূলত নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তবুও স্ট্রিমিং, গোপনীয়তা রক্ষা, গেমিং, ভ্রমণ এবং নিষিদ্ধ সাইট ও কনটেন্টে অ্যাক্সেস পেতেও এটি ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভিপিএনের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে।
ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা
ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করে ইন্টারনেট সংযোগকে নিরাপদ রাখা সম্ভব, যা ব্যবহারকারীর ডেটা অন্য কারও নজরদারি বা হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
ভিপিএন ব্যবহারকারীদের জন্য নিজের আইপি অ্যাড্রেস ও ভৌগোলিক অবস্থান গোপন রাখা সহজ হয়, ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপনদাতা এবং অনলাইন ট্র্যাকারের পক্ষে ব্যবহারকারীর অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
ভিপিএন ব্যবহারের অসুবিধা
ভিপিএন সেবাগুলি নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও কিছু ক্ষেত্রে এগুলি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে। বর্তমানে বাজারে হাজার হাজার ভিপিএন সফটওয়্যার ও অ্যাপ উপলব্ধ। ভিপিএন টুল ডাউনলোড করার সময় ব্যবহারকারীর মোবাইল বা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণসহ ফেসবুক, ইমেইল এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য ভিপিএন নির্মাতার হাতে চলে যেতে পারে।
ব্যবহারকারীর ডেটা ভিপিএন সেবাদাতার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়, তাই তথ্যের নিরাপত্তা নির্ভর করে সেই সেবাদাতার সততার ওপর। এছাড়াও, ভিপিএন ব্যবহারে ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে, কারণ ডেটা বিভিন্ন দুর্গম সার্ভারের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
একটি ভিপিএন সেটআপ বা কনফিগার করা অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য ভীতিকর হতে পারে, বিশেষত এনক্রিপশন প্রটোকল, সার্ভার নির্বাচন এবং টানেলিং আলাদা করার মতো উন্নত ফিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এছাড়া, ইন্টারনেট সংযোগে ট্রাবলশুটিং, ডিএনএস (ডোমেইন নেইম সিস্টেম) ফাঁস বা নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ্লিকেশন বা ডিভাইস সেটআপের ক্ষেত্রে কারিগরি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হতে পারে, যা তুলনামূলক কম প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
ভিপিএনের প্রভাব এবং বাছাইয়ের বিষয়
ভিপিএনের মূল উদ্দেশ্য যেহেতু তথ্য গোপন করা, তাই অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষে এসব তথ্য উদ্ঘাটন করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভিপিএন ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বহু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, এবং অপরাধীদের শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন ভিপিএন বিনামূল্যে বা কম খরচে ব্যবহার করা যায়, তবে উন্নত ফিচার এবং উচ্চগতির সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা পেতে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধের প্রয়োজন হয়। বাজারে থাকা সব ভিপিএনই যে ভালো পরিষেবা দেবে তা নয়। ব্যক্তির প্রয়োজন অনুযায়ী ভিপিএন বাছাই করতে হয়। এজন্য ভিপিএনের নিরাপত্তা ফিচার, গোপনীয়তা নীতিমালা, সার্ভার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটের গতি ও সক্ষমতা এবং ব্যবহারকারীর জন্য কতটা সহায়ক এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
প্রযুক্তিবিদরা ভিপিএন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচিতি, অবস্থান, ফিচার ও সুরক্ষা স্তরের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে ভিপিএন নির্বাচন করলে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হতে পারে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"