Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জলের পতনেই আনন্দ

  ম্যানহাটান থেকে মধ্যরাতে বাসে করে যাত্রা শুরু, গন্তব্য নায়াগ্রা ফলস। বাসে উঠতেই বব মার্লির বিখ্যাত গান 'বাফেলো সোলজার, ড্রেডড লক রাসতা...

 

নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জলের পতনেই আনন্দ

ম্যানহাটান থেকে মধ্যরাতে বাসে করে যাত্রা শুরু, গন্তব্য নায়াগ্রা ফলস। বাসে উঠতেই বব মার্লির বিখ্যাত গান 'বাফেলো সোলজার, ড্রেডড লক রাসতা' মনে পড়তে থাকে। নব্বই দশকে আমাদের প্রজন্মের অনেক তরুণের প্রিয় এই গান, মাঝে মাঝে প্যারোডি করেও গাইতাম। বব মার্লির গানটি মনে পড়ার কারণ হলো বাফেলোর নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাওয়া। সাত ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর সকালে বাফেলো শহরে পৌঁছাই। সবকিছু কেমন যেন অচেনা লাগে। বাফেলো সোলজারের গান ভুলে গিয়ে কানে বাজতে থাকে নায়াগ্রার জলপ্রপাতের প্রাকৃতিক সুর।


নায়াগ্রা ফলস দেখার উত্তেজনা অনুভব করতে থাকি। গুগল ম্যাপে দেখে নেই আরও কতটা পথ বাকি। ২১ কিলোমিটার দেখে অবাক হয়ে যাই। পরামর্শের জন্য আরিফ হোসেনকে ফোন দেই। তিনি কুশল জিজ্ঞাসা করে ভ্রমণের বিস্তারিত শোনেন এবং বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সকালের নাস্তা সমেত সাদা গাড়ি নিয়ে হাজির হন আরিফ। ভাবি (মিসেস আরিফ) যত্ন করে পরটা, মাংস, ডিম পাঠিয়েছেন। অচেনা ভূমিতে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হলো। নিজের কাজ ফেলে আরিফ আমাকে নায়াগ্রায় পৌঁছে দেন। কোন স্পট থেকে ঝর্ণা ভালো দেখা যায় সেসব গাইডের মতো বলে দেন। 


আরিফ সাবেক ক্রীড়া সাংবাদিক, এসএ টিভিতে কাজ করতেন। কয়েক বছর ধরে তিনি তার পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলোতে বাস করছেন।


আরিফের পরামর্শমতো স্টেট পার্কের মধ্য দিয়ে ঝরনার কাছে ছুটে যাই। চোখ ভরে দেখি কিভাবে স্বচ্ছ জলের ধারা ওপরে থেকে নিচে পড়ে। ঝরনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি মিউজিক শোনার আনন্দও নিই। এক জায়গায় বসে দীর্ঘক্ষণ ধরে এই মনোরম দৃশ্য দেখি। গিরিখাদের জলে পর্যটকদের ওয়াটার বাস ভ্রমণ ওপর থেকে দেখাও ছিল আনন্দের।


পকেট খালি হওয়ার ভয়ে ওয়াটার বাসে উঠতে দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু ভাবলাম, জীবনে হয়তো আর কখনও আসা হবে না। সবকিছু দেখতে হবে। হঠাৎ মনে হলো, কোনো ছবি তুলিনি। তখনই নিজের এবং ঝরনার ছবি তুলি। অন্যদেরও ছবি তুলে দিই। ভিডিও করে অফিসে পাঠাই।


নায়াগ্রার জলপ্রপাত দেখতে দেখতে কখন যে দুপুর হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। সংবিৎ ফেরে কানাডা থেকে আগত মফিজুর রহমান মুন্নার ফোনে। তিনি বর্ডার থেকে আমার অবস্থান জানতে চাইলেন। মুন্না জাতীয় দলের সাবেক পেস বোলার, বিকেএসপিতে আমার এক বছরের সিনিয়র। ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তাকে সামনে দেখতে পেয়ে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করতে থাকে।


যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নায়াগ্রা নদী থেকে ঝরনার উৎপত্তি। মুন্নার সঙ্গে গাড়ি থাকায় ঘুরতে সুবিধা হলো। তিনি আমাকে একটি দ্বীপে নিয়ে গেলেন। সাজানো গোছানো বাড়িঘর থাকলেও পুরো দ্বীপটি জনশূন্য মনে হলো। কিছুক্ষণ থাকার পর মনে হলো এটা যেন পরিত্যক্ত দ্বীপ। মানুষের উপস্থিতি না পেলেও দ্বীপটি নিরব মনে হয়নি। বাতাসের সুর, পাখির কোলাহল, নদীর ঢেউয়ের শব্দ সারাক্ষণ শোনা যাচ্ছিল। আমি বঙ্গ সন্তান দুচোখ ভরে বাফেলো, নায়াগ্রার সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি। ফাঁকে ফাঁকে গল্পও চলছিল। এমন নৈস্বর্গে ছবি না তোলার কারণ নেই।


সন্ধ্যা সাতটায় মুন্না ভাই আমাকে বাস কাউন্টারে নামিয়ে বর্ডার পেরিয়ে কানাডায় ফিরে গেলেন। সোয়া আটটায় আমার বাস। আরিফ দুপুরে ফোনে খোঁজ নিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় আমি তাকে ফোন দিয়ে একবার দেখা করতে বলি। কাজ ফেলে আরিফ আসেন, স্মৃতি হিসেবে দুজনে কয়েকটি ছবি তুলি। আরিফের কাছ থেকে বিদায় নেই।


প্রিয়জন হারানোর বেদনা মোচড় দিয়ে ওঠে। পরিবার নিয়ে ভালো থাকবেন আরিফ। মুন্না ভাই, দেখা হবে আমাদের জননী জন্মভূমিতে। আমি ক্ষণিকের অতিথি, বিদায় নিলাম।


ওহ, একটা বিষয়ে বলা হয়নি। চেনা পরিচিত কেউ নায়াগ্রা ফলস ভ্রমণের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলে মনে মনে বলতাম, কোনো দিন কি এই জলপ্রপাত স্বচক্ষে দেখতে পাব? প্রভূর কৃপায় আজ আমি নিজেই ছবি পোস্ট করছি। ভালো থাকুন।






সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "