প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান সংকটের আইনি সমাধানের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, "আমার বিশ...
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান সংকটের আইনি সমাধানের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, "আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে এবং হতাশ হবে না।"
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে এবং আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনার সুযোগ করে দিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, "আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে এবং হতাশ হতে হবে না।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারে পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "২০১৮ সালে ছাত্র সমাজের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার জন্য উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারের পরিপত্র বাতিল করে দেয়।"
তিনি আরও জানান, "সরকার এই পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে এবং মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করেছেন। এ সময়ে আবার ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। সরকার শুরু থেকেই যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। আন্দোলনকারীরা যখন রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করতে চায়, তাদের সেই সুযোগও দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।"
প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের উচ্চাভিলাষ পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে। যেহেতু বিষয়টি উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে, তাই সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।"
তিনি বলেন, "পরিতাপের বিষয় হলো কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অযথা কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেছে। আপনজন হারানোর বেদনা কতটা কষ্টের, তা আমি ভালো করেই জানি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা কখনই কাম্য ছিল না। চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নিচে ফেলে দেয়, অনেক ছাত্রদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের ওপর লাঠিপেটা এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। একজন মারা গেছে এবং অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ঢাকা, রংপুর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ পথচারী এবং দোকানিদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, এমনকি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোর চলাচলেও বাধা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীদের হলগুলোতে হামলা ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে, আবাসিক হলে প্রভোস্টদের হুমকি ও আক্রমণ করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আমি বিশ্বাস করি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসব সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং, সন্ত্রাসীরা তাদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা যেই হোক না কেন, উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে। হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অনভিপ্রেত ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। কারা উসকানি দিয়েছে, কারা দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা তদন্ত করে বের করা হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময়ে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করতে পারে। তাই পিতা-মাতা, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আমার আবেদন, আপনারা আপনাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকুন। একই সঙ্গে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা বিশেষভাবে নজর রাখুন।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"