মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর বেতকা মামুদাদপুর এলাকায় চাষ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম দামি আম, জাপানের বিখ্যাত মিয়াজাকি আম। এই আমের মিষ্টত...
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর বেতকা মামুদাদপুর এলাকায় চাষ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম দামি আম, জাপানের বিখ্যাত মিয়াজাকি আম। এই আমের মিষ্টতা সাধারণ আমের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। একটি আমের ওজন ৩৫০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। মিয়াজাকি নামটি এসেছে দক্ষিণ জাপানের কিয়োশু অঞ্চলের মিয়াজাকি শহর থেকে, যেখানে এই আমের জন্ম।
জাপানের ট্রেড প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মিয়াজাকি আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন এবং ফলিক এসিড রয়েছে, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
এই আমটির খ্যাতির অন্যতম কারণ হলো এর মূল্য। এটি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান আম হিসেবে পরিচিত। এক পিস মিয়াজাকি আমের দাম প্রায় ২১ হাজার টাকা। তবে কেজি দরে কিনলে দাম আরও বেশি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এই আম প্রতি কেজি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর বেতকা মামুদাতপুর গ্রামের রকি তার বাগানে চাষ করছেন বিখ্যাত মিয়াজাকি আম। ওই বাগানের ৪টি আমগাছ থেকে এ বছর ৩০ কেজি মিয়াজাকি আম উৎপাদিত হয়েছে, যা শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে। রকির বাগানে এই আম ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিয়াজাকি আম ছাড়াও রকির বাগানে রয়েছে ব্রুনাই কিং জাতের আম, যা একেকটি আমের ওজন ৪-৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এই আম ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রকির বাগানে এই আমগুলো সাধারণত ৩ থেকে সাড়ে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়, এবং সর্বোচ্চ একটি আম ১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ বেতকা গ্রামের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন রকি, আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে, নারায়ণগঞ্জে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০২০ সালে ফরমালিনমুক্ত ফল খাওয়ার ইচ্ছা থেকে, রকি তার বাড়ির আঙিনা ও পুকুরপারের পরিত্যক্ত জমিতে আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেন। এখন তার বাগানে ৭০০টি আম গাছ রয়েছে, যা থেকে বাণিজ্যিকভাবে আম বিক্রি শুরু হয়েছে। রকির পরিবার আশা করছে, এ বছর ৩ লাখ টাকার উপরে আম বিক্রি হবে।
রকির বাগানে এখন ২০-২৫ জাতের দেশি-বিদেশি আম উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে মিয়াজাকি কিং, চাকাপাত, চিয়াংমাই, আমেরিকান রেড পালমাল, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বারি-৪, বারি-১১, ফোরকেজি, গোরমতি, ব্যানানা, আল ফ্রনচো, ডকমাই, থাই কাঁচামিঠা, কাটিমন উল্লেখযোগ্য। দেশি জাতের আমের মধ্যে হাড়িভাঙ্গা, সুরমা, ফজলি, আশ্বিনী, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাক ফজলি, গুটি অন্যতম। এছাড়া তার বাগানে এসব আমের চারাও পাওয়া যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রকির বাগানে গাছে গাছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রকারের আম ঝুলে রয়েছে। বর্তমানে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) ব্যবসায়িক কাজে অবস্থান করছেন, তবে তার অনুপস্থিতিতেও গাছের পরিচর্যা অব্যাহত রয়েছে। একদিকে আম গাছে চলছে ওষুধ স্প্রে, অন্যদিকে চলছে আম সংগ্রহ। রকি বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটার পাশাপাশি পাকা উঠানে গর্ত করেও আম গাছ লাগিয়েছেন। তিনি কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে সমন্বিত রোগবালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে কীটপতঙ্গ দমন করেছেন। তার আমগাছগুলো বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি বাহারি আমের সৌন্দর্য মানুষের নজর কাড়ছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তার বাগানের আম দেখতে এবং কিনতে আসছেন।
রকির আম বাগানের শ্রমিক আসলাম হোসেন জানান, চার বছর আগে তারা এই আমবাগান শুরু করেন এবং প্রতিনিয়ত চারাগাছের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন। বর্তমানে তাদের বাগানে ৭০০ ধরনের দেশী-বিদেশি চারা রয়েছে, যার বেশিরভাগই বিদেশি জাতের। তারা বাগানকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যাতে সারা বছর আম পাওয়া যায়।
দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, "আমরা বিষমুক্ত আম খাওয়ার উদ্দেশ্যে এই বাগান শুরু করি, এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছি। আমরা কীটনাশক বা ফরমালিন ব্যবহার করি না। পোকামাকড় দমনে সমন্বিত রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করছি এবং অর্গানিকভাবে চাষাবাদ করছি।"
তিনি আরও বলেন, "চার বছর আগে আমরা রাজশাহী ও সাভার থেকে উন্নতমানের বিদেশি জাতের আম চারা এনে চাষাবাদ শুরু করি। এখন আমাদের বাগানে ৭০০টি আম গাছ রয়েছে এবং উন্নতমানের আম চারা পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর আমাদের বাগানের চারটি মিয়াজাকি আমগাছে ৩০ কেজির মতো আম উৎপাদিত হয়েছে।"
রকির স্ত্রী সোনালী বেগম বলেন, "আমরা আমের পাশাপাশি চারা উৎপাদন ও বিক্রি করছি। আমাদের বাগানে উন্নত মানের আমচারা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও রাম ভুটান, শান্তল, অ্যাপ্রিকট, অ্যাভোকাডো, জাবটিকাবা, চায়না থ্রি লিচু, লঙ্গন, আখরোট, কমলা, মালটা, আপেল, চেরি, ব্ল্যাকবেরি, মালবেরি, স্ট্রবেরি, তীন, জয়তুন, আলু বোখারা, পিচফল, আমড়া, কুল, জলপাই, জাম্বুরা ইত্যাদি ফলের গাছ রয়েছে।"
টংগিবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়নুল আবদিন তালুকদার বলেন, "রকি নিজ উদ্যোগে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করছেন। তার উৎপাদিত আমের গুণগত মান ভালো এবং বিষমুক্ত। আমাদের শেখানো প্রযুক্তি অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে আম উৎপাদন করছেন।"
মিয়াজাকি আমের মূল্য সম্পর্কে তিনি জানান, "এই আম দেখতে সুন্দর হওয়ায় এর দাম অন্যান্য আমের তুলনায় বেশি।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"