দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপস্থাপিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ ...
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপস্থাপিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রীতি অনুযায়ী, সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পরদিন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রথমবারের মতো যোগ দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনটি ছিল প্রাণবন্ত, তবে অর্থমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিরক্তি প্রকাশ এবং কিছু প্রশ্নকে অবমূল্যায়ন করায় একাধিকবার হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে অর্থমন্ত্রী বারবার প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ও অন্যান্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সাহায্য নেন। প্রথম থেকেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মান এবং পরিপক্বতা নিয়েও মন্তব্য করেন। পুরো সংবাদ সম্মেলনজুড়ে মন্ত্রীর বিরক্তি প্রকাশ ছিল স্পষ্ট।
শুক্রবার, ৭ জুন দুপুর ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন। এই আয়োজনের দায়িত্বে ছিল অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সঞ্চালনা করেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার।
অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাজেট নিয়ে যে ধরনের প্রশ্নের প্রত্যাশা করেছিলেন, সেগুলো তেমনভাবে আসেনি। তবে, কিছু প্রশ্ন সন্তোষজনক ছিল। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "এটা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার যোগ্য না আমি।"
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, "আমি একটু পরিপক্ব প্রশ্নের আশা করেছিলাম। আমি খুবই হতাশ হয়েছি। আপনারা (সাংবাদিকরা) আরও প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। এভাবে অতি সরলীকরণ করবেন না। একটু পরিপক্বতা নিয়ে আসুন।"
যারা আর্থিক খাতের বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রীর বার্তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমরা তো সব খোলাখুলি বলেছি। কোনো গোপনীয়তা রাখিনি। আপনি কেন বারবার একই কথায় যাচ্ছেন? এটা কী ধরনের প্রশ্ন! প্রশ্ন করার পদ্ধতি শিখতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এটা কোনো সাংবাদিকতা না। বারবার একই কথা বলছেন। এগুলো একটু দেখেন, দেখে শিখেন। তাহলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হবে।
গতকাল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আর অনুদান ছাড়া এই ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যদিও সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী এটি কমে বর্তমানে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"