সংসারের দায়িত্ব, কর্মব্যস্ততাসহ নানা কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয় যে নিজের জন্য সময় বের করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ইচ্ছা করলেই তো আর বেড়াতে যাওয়া সম...
সংসারের দায়িত্ব, কর্মব্যস্ততাসহ নানা কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয় যে নিজের জন্য সময় বের করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ইচ্ছা করলেই তো আর বেড়াতে যাওয়া সম্ভব হয় না! লম্বা ছুটি নিলেই বসের ভ্রুকুটির মুখোমুখি হতে হয়। তবে ঈদের মতো বড় উৎসবগুলো সেই সুযোগ নিয়ে আসে। এবারের ছুটিতে সব কাজ একপাশে রেখে অন্তত দুদিনের জন্য ছোট্ট একটি ট্রিপে বেরিয়ে পড়তে পারেন। এখানে তেমন কয়েকটি স্থানের সন্ধান রইল—
টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
প্রকৃতির মাধুর্যপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাওর ভ্রমণ হতে পারে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই সময়ে কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি—একটি কাব্যিক ছন্দে চলতে থাকে সবকিছু। টাঙ্গুয়ার হাওরের বিশেষ আকর্ষণ হলো নৌকায় রাত্রিযাপন, যা অন্য সব ভ্রমণ থেকে এটিকে আলাদা করে। বৃষ্টির মাঝে নৌকায় বসে চা খাওয়া ও আড্ডা দেওয়া যেন এক অন্য পৃথিবী। প্রতিটি চায়ের চুমুকে দূরের মেঘালয়ের পাহাড়গুলো যেন সবার মনে কবিতা জাগিয়ে তোলে।
বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরে দুই শতাধিক হাউসবোট রয়েছে, যেগুলোতে বিভিন্ন প্যাকেজে আরামদায়ক ভ্রমণের সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়াও স্বল্প বাজেটে হাওর ভ্রমণের জন্য রয়েছে ছোট-বড় কাঠ ও স্টিলের নৌকা। কেউ চাইলে পুরো নৌকা ভাড়া করতে পারেন বা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেও ট্যুরে যেতে পারেন।
নীলাচল, বান্দরবান
যারা পাহাড় ভালোবাসেন, তারা বর্ষায় নীলাচলে ঘুরে আসতে পারেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৬০০ ফুট উঁচু এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে মেঘ ছোঁয়া যায়। পর্যটকদের থাকার জন্য নীলাচলে রিসোর্টও রয়েছে। বান্দরবান শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক এঁকেবেঁকে নীলাচলে পৌঁছে দেয়। এই পথে তিন কিলোমিটার পাহাড় বেয়ে যেতে হয়, যেখানে পথে ছোট একটি পাড়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাসও দেখা যাবে।
রাতারগুল
বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন হলো রাতারগুল। এখানে প্রকৃতির নির্জনতা, পাখির কিচিরমিচির, সাদা বকের উড়াউড়ি এবং সবুজের প্রশান্তি মিলে এক অনন্য অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। এই বনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জলের ওপর বৃক্ষের বিস্তার। রাতারগুলের ৮০ শতাংশ উদ্ভিদে আচ্ছাদিত। এখানে হিজল, বেত, কদম, করচ, মুর্তা, অর্জুন, ছাতিম এবং বটসহ মোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ক্রান্তীয় জলবায়ুর কারণে এখানে প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
পর্যটকেরা ডিঙ্গি নৌকায় করে জলে অর্ধেক ডুবে থাকা হাজারখানেক সবুজ উদ্ভিদ অতিক্রম করে বনের গহিনে ভ্রমণ করতে আসেন। এছাড়াও, রাতারগুলের আশেপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ইকো-রিসোর্ট, যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে দুদিন কাটানো যেতে পারে।
কাপ্তাই লেক
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা পাহাড়, লেক এবং সবুজের সমারোহে অনন্য। ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই কৃত্রিম হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড়। এখানে ছোট-বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝর্ণা এবং জলের সাথে সবুজের মিতালি রয়েছে। পাহাড়ে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্ভার এবং লেকে বহু প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য রয়েছে। লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, পাখি এবং মানুষের জীবনযাত্রা মুগ্ধ করবে আপনাকে।
প্রকৃতিপ্রেমীরা হাউসবোট বা নৌকা ভাড়া করে লেকের জলে ভাসতে ভাসতে চারপাশটা দেখতে পারেন। দল বেঁধে নৌবিহার কিংবা প্যাডেল বোটে চড়ে লেক ভ্রমণ করার সুযোগও রয়েছে। এছাড়া স্পিডবোট বা নৌকা রিজার্ভ নিয়ে কাপ্তাই লেক ঘুরে দেখা ছাড়াও রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা, রাঙামাটি শহরসহ আরও অনেক স্পট ঘুরে দেখা যাবে। কাপ্তাইয়ের কাছে কর্ণফুলী নদীতে কায়াকিং করার ব্যবস্থাও রয়েছে, চাইলে সেই অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন।
সীতাকুণ্ড
যারা ঝরনা, পাহাড় ও সমুদ্র পছন্দ করেন, তারা শর্ট ট্রিপে যেতে পারেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। এখানে রয়েছে অনেকগুলো জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চন্দ্রনাথ পাহাড়, মহামায়া লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, কুমিরা ঘাট, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল, কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইল এবং সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক।
রাজধানী ঢাকা, কুমিল্লা, নরসিংদী, ফেনী, চট্টগ্রাম বা আশপাশের এলাকা থেকে সহজেই একদিনে সীতাকুণ্ড ঘুরে আসা যায়। যদিও একদিনে সীতাকুণ্ডের সব জায়গা ঘুরে দেখা সম্ভব নয়, তবে ডে ট্যুর হিসেবে চন্দ্রনাথ পাহাড়, খৈয়াছড়া ঝর্ণা এবং গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত অধিকাংশ ভ্রমণকারীর তালিকায় থাকে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"