Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

৪ কয়েদি বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে একমাস ধরে

  নদীর পাড় ধরে পালানোর সময় ধরা পড়েন চার কয়েদি। ছবি: সংগ্রহ  বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ভেদ করে পালানোর চেষ্টা করা চার মৃত্যুদণ্ডপ...

 

৪ কয়েদি বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে একমাস ধরে
নদীর পাড় ধরে পালানোর সময় ধরা পড়েন চার কয়েদি। ছবি: সংগ্রহ 


বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ভেদ করে পালানোর চেষ্টা করা চার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আটক হয়েছেন। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে, বগুড়া জেলা কারাগারের একতলা ভবনের কনডেম সেলের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তারা পালানোর চেষ্টা করেন।


এই চার কয়েদির মধ্যে মো. জাকারিয়া (৩৪) আছেন, যিনি বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে এবং উলট্ট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একটি স্কুলছাত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। অন্য তিনজন হলেন, কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু (৬০), নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইসরাফিলের ছেলে আমির হামজা ওরফে আমির হোসেন (৪১) এবং বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে ফরিদ শেখ (৩০)।


জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।


আজ দুপুরে ঢাকা থেকে বগুড়ায় পৌঁছান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান। তিনি বগুড়া জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে জানান, বগুড়ার কারাগারটি ১৮৩৩ সালে নির্মিত এবং এটি অনেক পুরোনো। ছাদ ফুটো করে কয়েদিরা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, "কীভাবে তারা নজর এড়িয়ে পালিয়ে গেল, কার কতটা দায় ছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"


তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় কারাগারের নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে। দুর্বলতা কোথায় ছিল, তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত করা হবে। পালানোর সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে, যা তদন্তের কাজে সহায়তা করবে।


এর আগে সকালে, বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে, চার কয়েদি ছাদ ফুটো করে কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। তারা বিছানার চাদর ব্যবহার করে দেয়াল টপকে বের হয়। রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের একাধিক টিম শহরে তল্লাশি শুরু করে এবং ভোর ৪টা ১০ মিনিটে শহরের চেলোপাড়া চাষী বাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।


যেভাবে আটক হলেন চার কয়েদি

বগুড়া শহরের চেলোপাড়ার বাসিন্দা আবু সাঈদ দুখু জানান, তিনি রাত আড়াইটায় ঢাকা থেকে ফিরে চেলোপাড়ায় পৌঁছান। লোডশেডিংয়ের কারণে, তিনি ও তার চার বন্ধু চেলোপাড়া করতোয়া নদীর বাঁশের ব্রিজে বসে ছিলেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে, নদীতে নির্মাণাধীন ব্রিজের কাছে অনেক কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। সেখানে এগিয়ে গেলে, তারা দেখতে পান চারজন মানুষ নদীর হাঁটু পানিতে হামাগুড়ি দিয়ে তীরে ওঠার চেষ্টা করছেন। প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে ব্যাগ ছিল। চোর সন্দেহে, চারজনকে নদী থেকে তুলে পাশের চাষী বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। চারজন নিজেদের রাজমিস্ত্রি পরিচয় দিয়ে জানান, বেজোড়া এলাকায় ঠিকাদার তাদের মারপিট করে নদীতে ফেলে দিয়েছেন এবং তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছেন।


তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং একজনের পরনে কয়েদির পায়জামা দেখে সন্দেহ হয়। ব্যাগ তল্লাশি করে নগদ ৯ হাজার টাকা, ৭০ প্যাকেট সিগারেট, একটি স্টিলের পাত, একটি স্ক্রু ড্রাইভার, এবং কয়েদির কাগজ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে তারা স্বীকার করে যে তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং কারাগার থেকে পালিয়েছে।


আবু সাঈদ দুখু আরও বলেন, রাজনৈতিক মামলায় অসংখ্যবার জেলে থাকায়, তিনি কারাগার থেকে পালানোর গুরুত্ব বোঝেন। এ কারণে, সঙ্গে সঙ্গে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পরিমল চন্দ্র দাসকে খবর দেন।


পৌর কাউন্সিলর পরিমল জানান, দুখুর মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি পুলিশকে জানিয়ে নিজে ঘটনাস্থলে যান। এ সময়, একজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ও স্থানীয়রা ধাওয়া করে তাকে আটক করে।


একমাস ধরে চলে খোঁড়াখুঁড়ি

আবু সাঈদ দুখু জানান, আটকের পর তাঁদের ব্যাগে একটি স্ক্রু ড্রাইভার ও স্টিলের পাত পাওয়া যায়। আসামিরা জানান, একমাস আগে তাঁরা একতলা ভবনের ছাদের এক কোনায় ফুটো করার পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী স্ক্রু ড্রাইভার ও বালতির হাতল ঘষে মাটি ফালানোর জন্য তৈরি করেন। জাফলং নামের ভবনটির ছাদ অনেক পুরোনো চুন সুরকি ও মাটির টালি দিয়ে তৈরি। তাঁরা একমাস ধরে প্রতি রাতে একজনের ঘাড়ে আরেকজন চড়ে ছাদ ফুটো করতে শুরু করেন। গত শনিবার রাত ২টার পর থেকে সেই ফুটো দিয়ে কাপড় চোপড়সহ নিজেরা বের হতে শুরু করেন। পরিধেয় বস্ত্র এবং বিছানার চাদর জোড়া দিয়ে রশি বানিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে জেলখানা সংলগ্ন করতোয়া নদীতে নামেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে লোকজন সন্দেহ করবে, এ কারণে তাঁরা নদী দিয়ে যেতে থাকেন।


দুখু বলেন, পলাতক চারজনের মধ্যে ফরিদ শেখের আত্মীয় বাড়ি চেলোপাড়ার পাশের নারুলীতে। তাঁরা সেখানে আশ্রয় নেওয়ার উদ্দেশে চেলোপাড়া ব্রিজের কাছে নদী থেকে তীরে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় কুকুরের দল ঘেউ ঘেউ শুরু করলে আমরা চোর সন্দেহে নদী থেকে চারজনকে আটক করি।


এদিকে জেলখানা থেকে পালানোর পর গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছেন বগুড়া জেলা কারাগারের জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল।






সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "