ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আজীমের শৈশবের বন্ধু আখতারুজ্...
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আজীমের শৈশবের বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিন। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। এ ছাড়াও, তাকে দেশে ফেরানোর জন্য অন্যান্য উপায়েও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শাহিনের জন্য ইন্টারপোল এবং সিয়ামের জন্য নেপাল প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা থেকে ফিরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
হারুন অর রশীদ বলেন, "কলকাতায় আমাদের তদন্ত কার্যক্রম সফল হয়েছে। এমপি আজীম হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম, তা পেয়েছি।" তিনি আরও জানান, ভারতের সিআইডিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, মাংসের টুকরোগুলো আজীমের লাশের অংশ হতে পারে, তবে ফরেনসিক এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ভারতীয় পুলিশ ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করে এ বিষয়ে জানাবে।
আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, ঢাকার ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ওয়াটার থিওরি’ ঢাকার ডিবির তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা দিয়েছে। তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তারা ‘ওয়াটার থিওরি’র বিষয়টি স্বীকার করে।
আসামিদের মতে, তারা সঞ্জীবা গার্ডেনের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের ওপরে পানি থেকে আসা তীব্র গন্ধ অনুভব করেছিলেন। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিকে অনুরোধ করা হয় কমোড, সেপটিক ট্যাংক, সুয়ারেজ লাইন পরীক্ষা করার জন্য। এরপর সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েক কেজি মাংসের টুকরো।
উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরোগুলো এমপি আজীমের লাশের অংশ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নমুনা ইতোমধ্যেই ভারতের ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’তে পাঠানো হয়েছে। এমপি কন্যা মুমতারিন ফিরদৌস ডরিনকেও কলকাতায় ডাকা হতে পারে।
আজীম হত্যার ঘটনায় ঢাকা ও কলকাতায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৬ মে, ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতায় যায়। সেখানে তারা কলকাতায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খাল, নিউটাউনের সঞ্জীবা আবাসন, সিআইডি ভবন, হাতিশাল খালসহ বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করেন। এছাড়া, কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং সিআইডি এডিজি আর রাজাশেখরণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে এমপি আজীম ভারতে যান এবং কলকাতার ব্যারাকপুর সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। ১৩ মে, তিনি চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন এবং পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর সংলগ্ন নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। গোপাল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কলকাতার নিউ টাউন থানার পুলিশ এবং সিআইডির কর্মকর্তারা, এবং তিনি বর্তমানে পুলিশের নজরদারিতে আছেন। ডিবির প্রতিনিধি দলও গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছে।
খুনের ঘটনা ২২ মে প্রকাশ্যে আসার পর, ওইদিনই ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় এমপি আজীমের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ভারতে এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডে ডিবি চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, তার চাচাতো ভাই তানভীর ভূঁইয়া, এবং শাহীনের বান্ধবী সেলেস্টিল রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। এছাড়া, কলকাতা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"