দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, সরকারের গঠনে দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সমর্থনে বিএনপির আন্দোলন প্রবল ছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জোর ...
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, সরকারের গঠনে দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সমর্থনে বিএনপির আন্দোলন প্রবল ছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জোর ও শান্তিপূর্ণ সরকারের গঠনের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছিল। কিন্তু, ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় মহাসমাবেশে অব্যাহত সমর্থনের পরিস্থিতি ভেঙে যায় এবং বিএনপির নিয়ন্ত্রণে পরিস্থিতি অস্থির হয়ে যায়। এর ফলে, ২০১৪ সালের মতো বিএনপির জনপ্রিয়তা কমে যায় এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনও বিএনপি বয়কট করে। প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণের বিকল্প না থাকায়, একপাক্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল, তবে একই সালে সরকারী দলের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় অনেক বিরোধ ও অস্থিরতা দেখা গেল। ফলে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়েছিল, যা শেষে জোড়াতালির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়ায়। এই বিএনপির জোটের জন্য ফলাফল হতে পারে না বলে অনেকে মনে করেছিলেন, এবং এটি অত্যন্ত হতাশাজনক ছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ছিল বিএনপি একটি মূল লক্ষ্য।
আন্দোলনের ব্যর্থতা পরে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো বিকল্প চিন্তা নেই। তাদের কাছে একটি অটল বিষয় হল, যদি তারা অংশ না নিয়ে নির্বাচন হয় , তবে সেই নির্বাচন বৈধ হবে না, এবং সরকারও তা স্বীকৃতি দেবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভাবে কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বের নির্বাচন কমিশনও স্বীকৃতি পাবে না।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ অনিবার্যভাবে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন করে। বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে নিজের দলের নেতাদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত করে দেয়। দ্বাদশ সংসদের কার্যক্রম চলমান, রাজনীতির নাটাই আওয়ামী লীগের হাতেই থাকে ।
এটি স্পষ্ট, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের স্বীকৃতি পেতে অসুবিধা হয়নি। পশ্চিমায় যেসব দেশ নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছিল, তাদের সরকারের সঙ্গে সহাস্য করমর্দনে এগিয়ে এসেছে। জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়ে বসা আওয়ামী লীগ বর্তমানে দেশজুড়ে উপজেলা নির্বাচনের দামামা বাজাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ৮ মে শুরু হবে এবং ২৩ এপ্রিল তারিখে এটি ঘটবে। পূর্বে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নির্দলীয় হতো, কিন্তু ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যোগ করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানেও আইনে দলীয় প্রতীকের নির্বাচন বিধান রয়েছে।
বিএনপির নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা না থাকা কারণে, ক্ষমতাসীন দল এবার দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠে যথেষ্ট বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে উপদলীয় বিরোধের পাশাপাশি স্বজনপ্রিয়তাও যুক্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ মন্ত্রী ও এমপি আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ের কৌশল নিতে চাইছেন এবং এ জন্য তারা প্রথমবার লক্ষ্য হিসাবে উপজেলা নির্বাচন নির্ধারণ করেছেন। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো এই নির্বাচনে প্রিয় প্রার্থী জয়ী হলে তারা নিরাপদ থাকবেন এবং এমপি দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিযোগিতা সার্থক হবে। দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরেও সংসদ সদস্যদের পছন্দের প্রার্থী ঘোষণায় কোন্দল আরও বাড়ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন বৈঠকে সচেতন হচ্ছেন। এই সম্পর্কে নেতাদের ব্যাপারে পরামর্শ ও গবেষণা চলছে। রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রচুর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যেই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে চাইছে যাতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানো যায়। এটি নির্বাচনে বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল যথার্থ প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থিত হতে সক্ষম হতে না পারার উপায়।
আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টা ও নেতাদের সতর্কতা নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হচ্ছে না।
বিএনপি তাদের সর্বাধিক নিরাপদ জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত, তাদের নেতাবৃন্দ দিনের পর দিন কেবল জাতীয় নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রাম-মিছিল করবে না বলে অনুমান করা যাচ্ছে । তারা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে চাইতে।
তবে, উপজেলা নির্বাচনে তাদের সাথে অংশগ্রহণের জন্য বেশ অনিচ্ছুকতা প্রকাশ করে। কিন্তু তারা যেসব সংগঠন পরিচালনা করে, সেগুলিতে কোনো অফিসিয়াল ঘোষণা করেননি। এ সংক্রান্তে কোনো তথ্য অনলাইনে প্রকাশিত হয়নি।
এছাড়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যে অবস্থান গ্রহণ করছে, সে সম্পর্কে আরো অনিশ্চিততা রয়েছে। তথ্যে অনিশ্চিততা বেড়ে চলেছে, যেমন নির্বাচনে যাত্রা করার উপযোগী কোনো নেতার নাম কোন প্রধান মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়নি।
অবশ্য, এই প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দরকারও আছে। এ নিয়ে বিএনপির কারণ নির্ণয়ে হতাশ হওয়া ছাড়া কোন পথ থাকে না।
একজন ভোটার হিসেবে, আমরা সবাই উপজেলা নির্বাচনের সময়ে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোট দেতে চাই। বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ নেয়, তারা সর্বাধিক জনপ্রিয় হবেন এবং দেশের মানুষের হৃদস্পন্দন ও আত্মগর্ব জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেন।
তবে, যদি তারা এই সুযোগ না পান ? তাদের অধিকার হরণ হবে? নির্বাচনের পথ খোলা আছে, কিন্তু যদি কোন দল সেই পথে অবাধ্য আটকে দিতে চায়, তবে এর প্রতিরোধ করা দরকার। গণতন্ত্রের এই অবাধ্য প্রক্রিয়ার অভাব পূর্বে কেমন দুর্গতি এনেছে তা বিএনপি জানে । তবে, আমাদের দায়িত্ব এবং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে ভূমিকা প্রদান করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"