ইস্টার্ণ রিফাইনারীর দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্পে নির্মাণে খরচ হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা এবং এটি দেশের জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্...
ইস্টার্ণ রিফাইনারীর দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্পে নির্মাণে খরচ হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা এবং এটি দেশের জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুরু করা হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু পরিকল্পনা অন্য বিকল্পে প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভিক পর্যালোচনার পর আনি নির্মাণকারী কোম্পানি প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এখনও বিপিসি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন না পেলেও, যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে সেটির প্রতি বিবেচনা এখনো চলমান।
দেশের জ্বালানি তেলের শুধুমাত্র সরকারি শোধনাগার, ইস্টার্ণ রিফাইনারীর প্রথম ইউনিট (ইআরএল-১), প্রথমবারের মত ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। এটি প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত তেল) পরিশোধন করতে পারে। দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা বর্তমানে ৯০ থেকে ৯৫ লাখ টন। একেবারেই অবশিষ্ট অর্থে তেল আমদানি করা হয় পরিশোধিত অবস্থায়। কিন্তু তেলের পরিশোধের ব্যায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে, সরকার ২০১০ সালে, প্রতি বছরে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্টার্ণ রিফাইনারীর দ্বিতীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজনগুলি গবেষণা করেছে। এর জন্য প্রাক্তন প্রজেক্টের বেশি খরচ করে, যার প্রাক্তন আনুমানিক ১৩ হাজার কোটি টাকা।
পরামর্শক, জমি অধিগ্রহণ, প্রস্তাবনা তৈরিসহ বিভিন্ন খাতে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা। সংশোধিত হয়ে বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের দেওয়ার কথা ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা এবং বিপিসি অর্থায়ন করবে ছয় হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি
প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের পরে, সাত বছর পর প্রকল্পের ফিল্ড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফরাসি প্রতিষ্ঠান টেকনিপ এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চুক্তি স্বাক্ষর করে। টেকনিপ প্রকল্পের ডিজাইন করবে, এবং ২০১৬ সালে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, পরামর্শক, জমি অধিগ্রহণ, প্রস্তাবনা তৈরি এবং অন্যান্য খাতে এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় পরিমাপ করা হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এই প্রকল্পে সরকারের অংশ ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা এবং বিপিসির অংশে ৬ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা হিসাবে অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। তবে, এখনও প্রকল্পটি শুরু হয়নি।
মন্ত্রালয়-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং বিদেশী ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু কোম্পানি বাংলাদেশের তেল পরিশোধনাগারের নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করলেও, ইস্টার্ণ রিফাইনারীর দ্বিতীয় ইউনিটের আকার ছোট হওয়ায় তারা এটি অগ্রাধিকার দেননি।
তবে, চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ এস আলম কর্তৃক ইআরএল-২ নির্মাণে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দেখা গেছে। গত বছরের আগস্ট মাসে, সরকার 'বেসরকারি পর্যায়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিপূর্বক মজুত, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও বিপণন নীতিমালা-২০২৩' প্রণয়ন করে। নীতিমালায় রিফাইনারী স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রাপ্তি/থাকা-সাপেক্ষে, বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদন ও ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এই সম্পর্কে, পতেঙ্গায় অবস্থিত ইআরএলের জমিতে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল শোধনাগার নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপ দ্বারা। প্রস্তাবনায় তিন থেকে পাঁচ মিলিয়ন টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারী নির্মাণের আগ্রহ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, এই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপ ও ইস্টার্ন রিফাইনারীর মধ্যে ৮০:২০ ইক্যুইটি শেয়ার থাকবে।
এতগুলো টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার পরও প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে না পারা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের শোধনাগার লাগবে কি না, এ বিষয়ে শুরু থেকে তারা ভালোভাবে স্টাডি করেনি। স্টাডি করলে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের বিভিন্ন বাধা ও ইস্যুগুলো উঠে আসত
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন
শেষ ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি বিভাগ একটি চিঠিতে বিপিসিকে অবগত করেছিল যে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি অনুষ্ঠিত হবে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে। এটি দেশীয় জ্বালানি কোম্পানির সঙ্গে বেসরকারি খাতের প্রথম অংশগ্রহণের সাথে একটি উদাহরণ। প্রকল্পে সম্প্রতি বিপিসি তাদের কমিটি গঠনের পরিক্রিয়ায় রয়েছে, যা গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নিযুক্ত হয়েছিল।
এ সংক্রান্তে, বিপিসির এক কর্মকর্তা একটি অজানা পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন যে, ইস্টার্ণ রিফাইনারীর দ্বিতীয় ইউনিটের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন অপেক্ষায় রয়েছে। এর ছাড়া, এস আলম গ্রুপ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে এবং এই বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন মন্ত্রণালয়ের কাছে অপেক্ষারত। আমরা আশা করি সম্প্রতি এই প্রস্তাবের সাথে সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি পাওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কাজ অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত হতে পারে যেন তা সঠিকভাবে যাচাই না করে। তাদের মতে, সরকারের একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন এ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, টাকা খরচ করার পরেও প্রজেক্ট বাস্তবায়নে অসমর্থ হওয়া খুব দুঃখজনক। তারা বলেছেন, আমাদের শোধনাগার যদি লাগবে তা পর্যায়ে বিচার করা উচিত ছিল। এটি বিবিধ বাধা এবং সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
একই সমস্যা নিরসনের দিকে সরকার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে, বিদেশি সংস্থাগুলো বিশ্বাস করছে না যে এতে ফান্ডিং করা যুক্তিযুক্ত। তাদের মতে, এখন নিজের অর্থেই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা উচিত। আবার, এস আলম গ্রুপ যখন অর্থায়ন করতে চাচ্ছে, তখন সরকারের উচিতভাবে এই সমস্যা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞরা অনুরোধ করেছেন।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"