Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

তিন পার্বত্য জেলায় আতঙ্কের নাম—‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ কঠোর পদক্ষেপ চান স্থানীয়রা

  দেশের তিনটি পাহাড়ি জেলায় ভয়াবহ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামের এক সংগঠন প্রচলিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সহজ সরল  পাহাড়ি ...

 

তিন পার্বত্য জেলায় আতঙ্কের নাম—‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ কঠোর পদক্ষেপ চান স্থানীয়রা


দেশের তিনটি পাহাড়ি জেলায় ভয়াবহ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামের এক সংগঠন প্রচলিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সহজ সরল  পাহাড়ি জীবনে এই সংগঠনের দখলে।  মুখ্যতঃ রুমা ও থানচি এলাকায় ব্যাংক ডাকাতি আর এরপর থেকেই কেএনএফকে নিয়ে পাহাড়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। । এর কারণে এই সময়ে বান্দরবানের বিভিন্ন অঞ্চলে বাসিন্দারা অত্যন্ত ভয়াবহ সত্তার মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।


সরকার ও সেনাবাহিনীর চেষ্টায়  বান্দরবানে প্রতিরোধাবলী অবকাঠামো স্থাপন করেছে। এই অবকাঠামো নিয়ে বৃহত্তর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তিন পাহাড়ি জেলায়। তবে, এই সময়ে জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে থমকে আছে সব উন্নয়ন কাজ


এই দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, কেএনএফ-এর সঙ্গে আর শান্তি আলোচনার কোনো মানে হয় না। তারা শান্তি আলোচনার সব শর্ত ভঙ্গ করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শান্তি আলোচনা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম একসঙ্গে চলতে পারে না। এখন সময় এসেছে কেএনএফকে শক্ত হাতে দমন করার।


এদিকে, স্থানীয় নেতাদের মতে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর কারণে বান্দরবানের অধিকাংশ বাসিন্দা অত্যন্ত অসুখী এবং তাদের জীবনযাপনের সুবিধার অভাবে ঘর ছেড়ে  পালাতে বাধ্য হচ্ছে।


আমাদের অব্যাহত অভিযানের কারণে কেএনএফ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শান্তি আলোচনা চলাকালীন তারা আবারও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন


মুঠোফোনে রুমা উপজেলার ১নং পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মার্মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেএনএফের কারণে রুমা উপজেলায় আগে থেকেই শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে আছে। তাদের অত্যাচারে অনেক আগে থেকেই ঘর ছাড়া অনেক মানুষ। এখন আবার নতুন করে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে ঘর ছেড়ে আরও মানুষ পালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কারণে আমি নিজেও এলাকা ছাড়া। 


তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। গত কয়েক দিনের ঘটনার পর মনে হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে এখন সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আমার এলাকায় মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।


চাঁদাবাজি থেকে ব্যাংক লুটে কেএনএফ


স্থানীয় তথ্যে বলা হচ্ছে যে, গত কয়েক বছর ধরে কেএনএফ রুমা ও থানচির বিভিন্ন উপ-জাতি গোষ্ঠীগুলি থেকে নিয়মিতভাবে চাঁদা নিয়ে আসছে । এই চাঁদা নিয়ে নিয়ে  আরও বেশি করে রাজস্ব অর্জনের চেষ্টা করছে কেএনএফ। একইভাবে, যখন অব্যাহত ব্যবসা চালানো হচ্ছে এই এলাকাগুলিতে, তারা চাঁদা প্রদান করতে অবশ্যই বাধ্য কর করছেন । চাঁদা প্রদান না করলে, তাদের অপহরণ করে নেওয়া হয়। প্রাণঘাতী দমনের চাপে, মোটা পরিমাণের মুক্তিপণ দিতে হচ্ছে। আরও একটি নতুন অবস্থা যোগ হচ্ছে, তারা এখন ব্যাংক লুটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজির  নতুন আক্রমণ চালিয়ে আসছে।


কেএনএফ নিয়মিত পাহাড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। চাঁদাবাজিসহ অপহরণ কেএনএফের নিত্যদিনের কার্যক্রম। সর্বশেষ তারা রুমা ও থানচিতে ব্যাংক লুট করেছে এবং থানায় হামলা করেছে

 

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লাঅং বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্রের সাথে কথা বলেছেন, তারা এখন কেএনএফের কারণে ভয় পাচ্ছেন । বান্দরবানের শান্তি ও সুখের পরিবার তাদের দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার কারণে এলাকায় ব্যবসা বন্ধ  বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকে , তাহলে চাঁদা দেওয়ার প্রয়োজন। অন্যথায়, তাদের জীবিকা  জড়িত হয় মারধর আর অপহরণে। বর্তমানে তারা আবার ব্যাংক লুটে নেওয়ার অভিযোগ এ নেমেছেন । এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম দিনে দিনে বাড়ছে।


কেএনএফ শুধু সন্ত্রাসী নয়, তারা পাহাড়ি কয়েকটি উপ-জাতি সম্প্রদায়কে নিয়ে আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। তাই তাদেরকে সরকারের উচিৎ শক্তভাবে দমন করা। শ্রীলঙ্কার তামিল বাহিনীর মতো তাদেরও নির্মূল করতে হবে

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান


জেলার মানবাধিকার কর্মী উচিংমং মারমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেএনএফের কারণে পাহাড়ি গ্রামের মানুষজন অনেক সমস্যায় আছে। নিয়মিত চাঁদাবাজির কারণে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ। তারা এত দিন চাঁদাবাজি করে সংগঠনের খরচ চালাতো। তারা এখন ব্যাংক লুট করা শুরু করেছে।


কেএনএফ-কে শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের মতো দমন করা উচিত   


শ্রীলঙ্কার বিদ্রোহী সংগঠন তামিল টাইগারদের মতো কেএনএফকে দমন করা উচিত বলে মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান।


তিনি  বলেন, কেএনএফ শুধু সন্ত্রাসী নয়, তারা পাহাড়ি কয়েকটি উপ-জাতি সম্প্রদায়কে নিয়ে আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। তাই তাদেরকে সরকারের উচিত শক্তভাবে দমন করা। শ্রীলঙ্কার তামিল বাহিনীর মতো তাদেরও নির্মূল করতে হবে। তোষামোদ করে পৃথিবীর কোথাও শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। গত ২৬ বছর ধরে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো শান্তি আসেনি। সরকারের এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার শক্ত হাতে তাদের দমন করার। সেনা সদস্যসহ পুলিশকে হত্যা করা হয়, ব্যাংক লুট করা হয় কিন্তু  স্থানীয় রাজনীতিবিদরা চুপ কেন। তাহলে তারা কি সন্ত্রাসীদের লালন করেন।


তিনি বলেন, কেএনএফকে দমনে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। পাহাড়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা সদস্যদের উপস্থিতি আরও বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। সেনাবাহিনীকে ছাড়া পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনীর পক্ষে এসব অপ-তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। পাহাড়ের শান্তি শৃঙ্খলার জন্য সেনাবাহিনীর আরও ক্যাম্প প্রয়োজন।


কারা এই কেএনএফ


গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কেএনএফের লোগোতে প্রতিষ্ঠাকাল ২০০৮ লেখা থাকলেও ২০১৮ সালে সংগঠনটির সন্ত্রাসী কার্যক্রম সবার নজরে আসে। সর্বশেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পাহাড়ে সংগঠনটির সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে। এর পর থেকে সংগঠনটির বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। সংগঠনটি পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক আয়তনের অঞ্চলকে নিয়ে বেআইনি ও মনগড়া মানচিত্র তৈরি করেছে। তাদের এই কল্পিত মানচিত্রের তিন পাশে রয়েছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত। বান্দরবান পাহাড়ের বম, পাঙ্খুয়া, খুমি, ম্রো এবং খিয়াং নামক ক্ষুদ্র ছয়টি জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠন হয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ। কেএনএফ প্রধানের নাম হলো নাথান বম।


এদিকে র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তারা কেএনএফরের ১৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন। সংগঠনটির বিরুদ্ধে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি রেখেছে র‍্যাব। 


নাথান বম কে?


গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রধান হলেন নাথান বম। নাথান বম রুমা উপজেলার বম উপ-জাতি সম্প্রদায়ের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্র। রুমার এডেন পাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি।


কোথায় আছেন নাথান বম?


গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা মিজোরাম ও মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান করেন। তবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার সুবিধা নিয়ে দ্রুত নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। এছাড়া নাথান বম বেশিরভাগ সময় মিজোরামে থাকেন বলেও জানা গেছে।


কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিরুদ্ধে পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা ও গুপ্ত বোমা (আইইডি) বিস্ফোরণে অন্তত পাঁচ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া কুকি সন্ত্রাসীদের অতর্কিত সশস্ত্র হামলায় তিনজন কর্মকর্তাসহ মোট ১১ সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।


আরও জানা যায়, কেএনএফ নিয়মিত পাহাড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। চাঁদাবাজিসহ অপহরণ কেএনএফের নিত্যদিনের কার্যক্রম। সর্বশেষ তারা রুমা ও থানচিতে ব্যাংক লুট করেছে এবং থানায় হামলা করেছে।


কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান


বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের শাখার অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।


শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।


এই সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, র‍্যাব এর আগেও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কার্যকলাপ শনাক্ত করে। তারা পাহাড়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি সংগঠনকে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সে সময় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সকল সদস্য এবং কেএনএফের কিছু সদস্যকে আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হই। 


তিনি বলেন, আমাদের অব্যাহত অভিযানের কারণে কেএনএফ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শান্তি আলোচনা চলাকালীন তারা আবারও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।


তিনি আরও বলেন, গতকাল দুপুর থেকে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করি। সন্ধ্যায় আমরা তাকে উদ্ধার করি। আমাদের অভিযান এখনো চলমান আছে। যেহেতু পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র তাদের কাছে রয়ে গেছে। আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবো।



সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "