রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পরিবার পরিকল্পনা হাসপাতালের সামনে রাস্তার পাশে মাছ বেচার দৃশ্য দেখা যেত। দুলাল মিয়া ও তাঁর চার ছেলে নিয়ে মাছ বেচতেন...
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পরিবার পরিকল্পনা হাসপাতালের সামনে রাস্তার পাশে মাছ বেচার দৃশ্য দেখা যেত। দুলাল মিয়া ও তাঁর চার ছেলে নিয়ে মাছ বেচতেন। তাদের পাশেই মাছ বিক্রি করতেন জাকির হোসেন এবং তার ছেলে শাওন ও সম্রাট। মাছ নিয়ে বসার জায়গার জন্য দুলালের ছেলে আতাউরের সঙ্গে শাওনের মধ্যে ঝগড়া হয়।
এই অসাধারণ ঘটনায় আতাউরের বড় ভাই আবদুল আজিজ হত্যা হয়। এই হত্যায় জড়িত হওয়ার অভিযোগে অভিযোক্ত করা হয়েছে ১৭ জনের মধ্যে, যার মধ্যে ১২ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জারি করা হয়েছে, এবং অভিযুক্ত পাঁচজনকে কিশোর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজিজের বাবা দুলাল মিয়া বলেন যে, তারা তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে। আসামি জাকির হোসেনদের বাড়িও সেই এলাকায়। ২০১৩ সালে গ্রামে একটি খুনের ঘটনা ঘটে যার পরিণামে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব হত। তবে, মোহাম্মদপুরে এসে মাছের ব্যবসা করে আসছিল উভয় পক্ষ।
দুলাল মিয়া বলেন, "ঘটনার দিন সকালে বসার জায়গায় একবার ঝগড়া হয়ে ছিল। মিটমাটও হয়ে গিয়েছিল। তবে রাতে আমার ছেলেকে পাকড়ে নিয়ে তারা খুন করেছিল।" দুলাল মিয়া আদাবরে বাস করেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকালে মাছ বিক্রির বসার জায়গা নিয়ে দু’পক্ষের সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ঘটনাস্থলে ছাইচাপা দেওয়া হলেও আসামিপক্ষ মনে মনে বিক্ষুব্ধ ছিল। ওই দিন রাত ৮টার দিকে আদাবরের ৮ নম্বর রোডের আহসান উল্লাহ মার্কেটের সামনে আসামি হান্নান ভূঁইয়ার তৈরি পোশাকের দোকানের সামনে শান্ত হোসেন (১৬), শাওন (২০), সম্রাট (২১), জয় হোসাইন (১৭), জাকির মিয়া (৫০), মোশারফ (৪৭), মিলন (৪২), আক্তার মিয়া (৩০), মহররম মিয়া (৪১) ও কতুব মিয়া জড়ো হয়। এ সময় তারা আতাউরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে আতাউরকে সেখানে ডেকে এনে শুরু করে এলোপাতাড়ি মারধর। খবর পেয়ে আতাউরের বড় ভাই আবদুল আজিজ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ভাইকে মারধরের কারণ জানতে চান তিনি। এ সময় আসামিরা আজিজকেও মারধর করে। প্রাণ বাঁচাতে দুই ভাই মার্কেটের নিচতলায় একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে আসামি শাওন ফোন করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য নাহিদ, দিপু, জনি, রাসেল ও শামীমকে ঘটনাস্থলে ডাকে। তারও দুই ভাইয়ের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আতাউরের ডান কাঁধের পাশে শান্ত ছুরিকাঘাত করে। এ সময় আজিজ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁর বুকের বাঁ পাশে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় শান্ত। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। আতাউর গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনায় আজিজের বাবা দুলাল মিয়া বাদী হয়ে ২৫ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন আদাবর থানার এসআই আব্দুল মোমিন। শান্ত, শাওন, সম্রাট ও জয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপর আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে নিহতের বাবা দুলাল মিয়াকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল।
পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর (ডিবি) পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। ডিবির এসআই কমল বড়াল তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তে শেষে তিনি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় ১৫ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় অভিযোগপত্রে। এতে বাদী আদালতে নারাজি দেন। ফলে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সিআইডির এসআই নিউটন কুমার দত্ত মামলাটির তদন্ত ভার পান। তিনি আসামি ১৯ বছরের দিপুকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দিপু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। নাহিদ, দিপু, রাসেল, শাওন, জনি ও শান্ত একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই ছয়জনসহ শামীম ও জয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই নিউটন কুমার দত্ত সমকালকে বলেন, আজিজ হত্যাকাণ্ডে ১৭ জনের সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"