সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরালো ভাবে বলেছেন যে, বিদেশিদের কাছে নালিশ করে কোনো রকম কোনো লাভ হবে না। আর বিদেশিবুদ্ধিতে দেশ কোনো ভাবেই ...
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরালো ভাবে বলেছেন যে, বিদেশিদের কাছে নালিশ করে কোনো রকম কোনো লাভ হবে না। আর বিদেশিবুদ্ধিতে দেশ কোনো ভাবেই চলবে না। বরং, গণতান্ত্রিক অবস্থা সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ অবাধ প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা প্রতিটি দেশের নির্বাচন দেখেছি।
গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংসদ যথার্থভাবে চলবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ অবাধ প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে। সংসদকে যথার্থভাবে এবং কার্যকরভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ৫০টি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সংসদে পাস হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবস্থান করেন সভাপতি হিসাবে শেষ দিনের অধিবেশনে। তারা মানে বিএনপি-জামায়াত যৌথ চক্রের মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে নালিশ করার সম্পর্কে আলোচনা করেন। বিএনপি-জামায়াত জানান যে, রাজনৈতিক কারণে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, যদিও তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ ও অগ্নিসংযোগের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে তারা বেশ কয়েকজন নিরাপদ মানুষের হত্যা এবং অনেকেই জীবিত পুড়ে মারা হয়েছে এই অমানবিক আক্রমণের ফলে।
২০১৩-২০১৫ এবং ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসের উপর একটি ভিডিও ক্লিপ জাতীয় সংসদে প্রদর্শন করা হয়। এতে তাদের বর্বরতা দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভিডিও দেখার পর খুবই আশ্চর্য হয়েছেন। এটি দেখে আরও বেশি করে তাদের অপরাধ গ্রহণ করা হবে না। তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক মূল্যে কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। যারা এ ধরনের অপরাধে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী আইন প্রণেতাদের বিষয়টি পরিক্ষা করতে আহ্বান করেন এবং অপরাধীদের শাস্তি পেতে নিশ্চিত করা যাবে তা নিশ্চিত করতে বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি বোমা হামলায় মারা গেছে মহিলা এবং শিশুও। এই বাংলাদেশে বিএনপি মানুষ হত্যা এবং দুর্নীতির মাধ্যমে আবির্ভূত হয়েছে এর চরিত্র। বিএনপি কর্মীরা লন্ডন থেকে নির্দেশ পেয়ে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করছে এবং হামলার ছবি লন্ডনে পাঠিয়েছে। এ ধরনের নৈরাজ্যকর কার্যকাণ্ডে বিচার দিতে জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা জানান, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না কারণ তারা জানে যে তারা ভোট এবং জনসমর্থনও পাবে না। জনগণের প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদেরের এক মন্তব্যের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে এ ধরনের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কোনো নির্বাচন হয়নি।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনগণের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে নারী, নতুন ও তরুণ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২৩৩টি আসন জিতেছিলেন এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ৩০০টির মধ্যে ৩০টি আসন জিতেছিল। এরপর থেকে বিএনপি নির্বাচনকে আগে পেছনে ফেলে এনে আন্দোলন শুরু করে।
শেখ হাসিনা বলেন, জি এম কাদেরের দুই স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও তার ভাই এইচএম এরশাদের সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরিসংখ্যান দেখাননি। একজন সামরিক স্বৈরশাসক নির্বাচনে কারচুপির পথ দেখিয়েছিলেন, আরেকজন একই পথে হেঁটেছেন।
এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালের নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, তৎকালীন সরকার ভোটের বাক্স তালাবদ্ধ করে এবং ৪৮ ঘণ্টা পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেছিল। কারণ, নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে জয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, আমি আনন্দিত হব যদি তিনি (জিএম কাদের) তার ভাইয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের পরিসংখ্যানও দেখান।
বিএনপি সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের মতো ১৯৮৬ সালের নির্বাচনও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ভোট কারচুপির জন্য জনগণের আন্দোলনের মুখে খালেদাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এতগুলো আসন কীভাবে জিতেছে তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। আওয়ামী লীগ বারবার জনসমর্থন পেয়েছে কারণ এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এ দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে, তারা জনগণের সেবা করে এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে। আগামী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে।
নতুন মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যেই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে এবং চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সহনশীলতার পর্যায় রাখতে তারা দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তার সরকার 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি' অব্যাহত রাখবে বলেও প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সরকারি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। এগুলো ছাড়াও, তিনি বলেন, তারা যথার্থ ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী হওয়া নিশ্চিত করবে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করবে, সরকারি চাকরিতে শূন্য পদে নিয়োগ দেবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনবে, নতুন পণ্য উৎপাদন করবে, বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন রপ্তানি বাজার অনুসন্ধান করবে। যেমনটি এখন তৈরি পোশাক খাত ব্যবহার করা হচ্ছে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"