Page Nav

HIDE
Breaking News:
latest

অসংখ্য মসজিদের মধ্যে মাত্র ইতিহাস সমৃদ্ধ তিন মসজিদ জেনে নিন

  আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজারের অধিক। এই অগণিত মসজিদের মধ্যে অসংখ্য ঐতিহাসিক ধনী মসজিদ রয়েছে। কোনোটি ১৩০...

 

অসংখ্য মসজিদের মধ্যে মাত্র ইতিহাস সমৃদ্ধ তিন মসজিদ


আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজারের অধিক। এই অগণিত মসজিদের মধ্যে অসংখ্য ঐতিহাসিক ধনী মসজিদ রয়েছে। কোনোটি ১৩০০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আর কিছু মসজিদের বয়স প্রায় ২৫০ বছর, তবে তারা এখনও শক্ত করে দাঁড়িয়ে  আছে। এই অসংখ্য মসজিদের মধ্যে, আজকে মাত্র তিনটি মসজিদের আলোচনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো—


দারাসবাড়ি মসজিদ - বাংলার প্রথম যুগের অনন্য নিদর্শন 


তখন ১৯৭২ সালে ঘটনা। স্বাধীন দেশের সোনাফলা মাটিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কৃষক চাষ করছিলেন। লাঙল দাবানোর সঙ্গে সঙ্গে তার শক্ত মাটির অনুভব হল। লাঙল আর কোন মতেই চলছেই না।  বরং যত জোর দেওয়া হলো আর তাতেই রেরিয়ে এলো  আবির রং-এর ইট। আরেকটু দূরে যেতেও একই সমস্যা হয়েছিল। কৃষক বেজায় চিন্তায় পরে গেলো , কি হতে পারে, কি হতে পারে বলে মাথা তার নষ্ট। উপায় না পেয়ে পাড়ার লোককে বিষয়টি জানালেন তিনি। আর কি এটা গোপন থাকে, এককান দু’কান করে খবর পেল স্থানীয় প্রশাসন।


খোঁড়া হয়ে গেল মাটি। 'দারাসবাড়ি মসজিদ' এক উদাহরণ হিসেবে ফুটে উঠলো। তবে প্রথম দিকে এ মসজিদের নাম দারাসবাড়ি ছিল না । এই মসজিদের প্রারম্ভিক নাম 'ফিরোজপুর মসজিদ' ছিল।


আর এভাবেই বেরিয়ে এলো দারাসবাড়ি মসজিদ। হয়ে গেলো  বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। বাংলাদেশ ভারত এর সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদের রয়েছে এক সুন্দর ইতিহাস। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছোট সোনা মসজিদ ও কোতয়ালী দরজার মধ্যবর্তী স্থানে ওমরপুরে দারাসবাড়ি মসজিদের অবস্থান। 


ধারণা করা হয় সুলতান হোসেন শাহ ওই এলাকার শাসক নিযুক্ত হন গত পঞ্চদশ শতাব্দীতে। ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার আদি রাজধানী গৌড়ের ফিরোজপুরে তখনকার শাসক সুলতান শামস উদ্দীন ইউসুফ শাহের আদেশে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল ফিরোজপুর মসজিদ। 


প্রশ্ন হলো দারাসবাড়ি নামটি কিভাবে এলো। মসজিদের অদূরে দারাসবাড়ি নির্মাণ করেন। আরবি দরস অর্থ পাঠ। এখন যেমন স্কুল কলেজ আর তখনকার  শিক্ষাঙ্গনকে বলা হতো দারসবাড়ি যা পড়াশুনা করার জায়গা । এরপর থেকে দারাসবাড়ির সুনাম, সুখ্যাতিতে এলাকার নামও পাল্টে যায়। বনে যায়  দারাসবাড়ি। এর সঙ্গে পাল্টে যায় মসজিদের নামও। আর তখন থেকেই পরিচিত হয় ‘দারাসবাড়ি মসজিদ’ নামে।


ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ১ রমজান স্বাধীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহের রাজত্বকালে এখানেই এক সুবিশাল আবাসিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাদ্রাসাটি পাঠদান ও অন্যান্য দিক অন্যান্য শিক্ষা পরীস্থানের তুলনায় একটু অন্যরকম ছিল যা অনেকটা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত। এখানেই মুহাম্মদ বিন ইয়াজদান বখশ নামের একজন বুজুর্গ আলিম নিজ হাতে বুখারি শরিফ লিপিবদ্ধ করেন এবং তিনিই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন।


মসজিদের অভ্যন্তর দুই অংশে বিভক্ত। এর আয়তন ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি দৈর্য্য ও ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রস্থ। মসজিদের উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্ন দেখা যায়। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে একটি বারান্দা; যার আয়াতন ১০ ফুট ৭ ইঞ্চি। বারান্দার খিলানে ৭টি পাথরের স্তম্ভের ওপরের ৬টি ক্ষুদ্রাকৃতি গম্বুজ এবং মধ্যবর্তীটি গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড়। উত্তর দক্ষিণে ছিল ৩টি করে জানালা।


এই দারাসবাড়ি মসজিদের বাহির এবং অভ্যন্তর দেয়ালে টেরাকোটা খচিত আকর্ষণীয় বিভিন্ন কারুকাজ দেখা যায়। পশ্চিমের দেয়ালে পাশাপাশি ৩টি করে ৯টি কারুকার্য খচিত মেহরাব এখনও লক্ষণীয় আছে। যা চমৎকার সুন্দর্য হয়ে ফুটে উঠেছে। মসজিদটির চার পার্শ্বে দেয়াল ও কয়েকটি প্রস্তর স্তম্ভের মূলদেশ ব্যতীত এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এক সময় এখানে অবস্থিত তোগরা অক্ষরে উত্কীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি এখন কলকাতা জাদুঘরে রক্ষিত আছে বলে জানা যায়।



হারানো মসজিদ - ১৩৭৭ বছরের পুরোনো ইট থেকে পরিচয়


লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামের এক প্রান্ত। এখানে অব্যাহত আছে সারি সারি ফসলের মাঠের অধীনে একটি বিরল দৃশ্য। এই এলাকায় অনেক পুরাতন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল১৩৭৭ বছর আগে , যেগুলোর মধ্যে একটি এখনও এশিয়ার প্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত।


এটি ১৯৮৭ সালের কথা। সমতল জায়গা থেকে একটি উঁচু জায়গা, যেটি প্রাকৃতিক জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত ছিল, সেখানে গ্রামবাসীরা পরিস্কার করার চেষ্টা করেছিলেন যে এর ভিতরে কি আছে দেখতে । অন্ধকার এই অঞ্চলে সেখানের জঙ্গলের প্রাচীন ইট বেরিয়ে আসে। মাটি ও ইট সরাতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় মসজিদের ভিত।


এই ধারণাটি সাম্প্রতিক নয়, বরং পূর্বেও বাংলাদেশে এই ধরণের পোড়া মাটির স্থাপত্য দেখা গিয়েছে। প্রশ্নটি হলো, এই মসজিদের বিশেষত্ব কোথায়? এটির নির্মাতা বা নির্মাণকারীরা কে ছিলেন, এটি সংক্ষেপে বলা যাবে না। আবিষ্কৃত ইতিহাসিক সাক্ষীদের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এই মসজিদটির নির্মাণ সম্প্রতি প্রায় ৬৯০ খ্রিস্টাব্দে বা ৬৯ হিজরির দিকে ঘটেছিল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি , এ মসজিদটির বয়স এক হাজার তিনশত সাতাশ বছর অতিক্রম করে করবে বলে ধারণা সবার।


মসজিদের অস্তিত্ব নিশ্চিত করার জন্য খননের পর খুঁজে পাওয়া শিলালিপিতে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, হিজরি ৬৯ সাল।’ এই শিলালিপির মাধ্যমে অধ্যাদেশগত প্রমাণিত হয়েছে যে, মসজিদটি ৬৯ হিজরি সালে নির্মিত হয়েছিল। খননের পর মসজিদের মেহরাব, ঈদগাহ মাঠ এবং খুতবার মিম্বরও সম্পূর্ণভাবে  খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এলাকার আদিবাসী লোকজনএই মসজিদটিকে ‘হারানো মসজিদ’ নামে পরিচিত করেছে।


ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাহাবী হজরত আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন এই এলাকার মধ্যে দিয়ে । বর্তমানে চীনের স্মরণীয় কোয়াংতাও নদীর তীরে কোয়াংতাও শহরে তাঁর নির্মিত মসজিদ ও মাজারটি আজও অবস্থিত। ব্রিটিশ প্রাচীনতাবিদরা এখনো দাবি করেন, খ্রিষ্টপূর্ব যুগে ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর তীরে সিকিম হয়ে চীনের মাধ্যমে আরব ও রোমান বণিকদের বাণিজ্য বহরের সম্পর্কে অনেক প্রমাণ রয়েছে। হারানো মসজিদ টি  সাহাবী আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) এর নির্মাণের জন্য হতে পারে।


তবে ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দের এই মসজিদের নির্মাণ আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ নেই, কারণ বাংলায় সভ্যতার প্রগতি যেভাবে খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ বছরে রোমান, গ্রিক, পার্সি সংস্কৃতির সাথে তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই মসজিদের নির্মাণের সময়ে বাংলায় খাঁড়গ বংশের শাসন ছিল, যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন ।



পাগলা মসজিদ - খরস্রোতা নরসুন্দার তীরের এক আধ্যাত্মিক পুরুষের স্মৃতি


নরসুন্দা নদীর পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ শহরে অবস্থিত প্রায় আড়াইশ বছর পুরাতন ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এই মসজিদের স্থাপনা অত্যন্ত সুন্দর এবং নির্মাণের ধারণা অত্যেন্ত অদ্ভুত। এটি তিনটি তলা বিশিষ্ট এবং ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং ৫ তলা ভবনের সমান একটি মিনার সহিত পাগলা মসজিদ চমৎকার দৃশ্য প্রদর্শিত করে। তবে, এই মসজিদের স্থাপনা কিভাবে হয়েছিল চলুন জেনে নেই?


মহাবীর ঈশা খানের নিকটস্থ পুরুষ দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে  জিলকদর পাগলা ছিলেন একজন ধার্মিক ব্যক্তি, যার জীবনের লক্ষ্য ছিল আধ্যাত্মিক বিষয়ে ।  মানুষের মধ্যে তিনি "পাগলা সাহেব" নামে পরিচিত ছিলেন। এই আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিত হন এবং তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন। তার ইবাদত-বন্দেগির জন্য দেওয়ান পরিবারের পক্ষ থেকে পাগলা সাহেবের নিজের পছন্দের স্থান নরসুন্দা নদীর মাঝখানে টিলার উপর একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই ঘরটি পরবর্তীতে ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এমন জনশ্রুতিই সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। অপর জনশ্রুতি অনুসারে, তত্কালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগমকে জনগণ ‘পাগলা বিবি’ বলে ডাকত। দেওয়ানবাড়ির এ বেগম নরসুন্দার তীরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে ‘পাগলা বিবির মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।


পাগলা মসজিদটি একটি অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও এর আশেপাশের অঞ্চলের সব ধর্মাবলম্বীর কাছে পরিগণিত, যেখানে মানত বা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এই বিশ্বাস সুতরাং বিভিন্ন বয়সী হিন্দু, মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ এখানে আসেন। তাদের নিকট টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করা হয়। এই দান-খয়রাতের ফলে পাগলা মসজিদ দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গর্বিত হয়েছে।



সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "