মৃগী রোগ সম্পর্কে আমাদের সবাই কমবেশি ধারণা আছে। এ রোগে খিঁচুনি হয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, ঠোঁট, জিহ্বা কেটে যায়, অনেক সময় পায়খানা-প...
মৃগী রোগ সম্পর্কে আমাদের সবাই কমবেশি ধারণা আছে। এ রোগে খিঁচুনি হয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, ঠোঁট, জিহ্বা কেটে যায়, অনেক সময় পায়খানা-প্রস্রাবের কন্ট্রোলও থাকে না। তবে সব মৃগী রোগেই এই কমন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। খিঁচুনি ছাড়াও মৃগী রোগ হতে পারে, যেমন-বাচ্চারা হঠাৎ উদ্দেশ্যবিহীনভাবে একদিকে তাকিয়ে থাকে, খেলতে খেলতে কারণ ছাড়া দাঁড়িয়ে যায়, পড়ে যায়, খাওয়ার মাঝখানে কয়েক সেকেন্ডের জন্য খাওয়া বন্ধ করে দেয়, হাত থেকে খাবার পড়ে যায় ইত্যাদি আরো অনেক।
এ ছাড়াও ছোট বড় সবার ক্ষেত্রে হতে পারে, যেমন-কয়েকদিন পরপর হঠাৎ করে অস্থির হয়ে যাওয়া, পাগলামি করা, উলটাপালটা কথা বলা যা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত থাকে, তারপর ওষুধ ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। ভালো থাকা অবস্থায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে। কিন্তু অসুস্থতার সময় সে কি করেছে তা বলতে বা মনে করতে পারে না-এগুলো সবই মৃগী রোগের লক্ষণ।
রোগের ইতিহাস ঠিকমতো না নিলে মৃগী রোগীর ডায়াগনোসিস প্রায়ই ভুল হয়। বেশিভাগ ক্ষেত্রে মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়া হিসাবে এদের চিকিৎসা চলে। সিজোফ্রেনিয়ার সঙ্গে এ ধরনের মৃগী রোগের মূল পার্থক্য হলো-সিজোফ্রেনিয়ায় রোগীর পাগলামি, অস্বাভাবিক আচরণ ওষুধ ছাড়া কমে না, কিন্তু মৃগী রোগীর অস্বাভাবিক আচরণ সাময়িক, রোগের ‘এটাক পিরিয়ড’ শেষ হলে রোগী আবার সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ভ্রান্ত ধারণা: মৃগী রোগীর আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী অনেকেই ভাবেন, এ রোগের সমস্যাগুলো জিন-ভূতের আছরে হয়। সে জন্য ঝাড়ফুঁক করেন। ঝাড়ফুঁকের সঙ্গে কবিরাজের বিভিন্ন বিধি-নিষেধে রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউ কেউ মনে করেন মৃগী রোগ ছোঁয়াচে; রোগী থেকে রোগীর আত্মীয়স্বজন, স্বামী-স্ত্রীর মৃগী রোগ হতে পারে-এটাও ভুল। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ে শাদিও ভেঙে যায়, যে ওই মেয়ের এ রোগ কখনো ভালো হবে না, ভবিষ্যতে তার ছেলেমেয়ে হলে তারা সুস্থ হবে না। এসবই আসলে সব ভ্রান্ত ধারণা।
চিকিৎসা: মৃগী রোগে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এজন্য চিকিৎসকরা প্রথমে কম ডোজে ওষুধ শুরু করেন। কারণ সবার ক্ষেত্রে ওষুধের একই রকম ডোজ প্রয়োজন হয় না। বেশিভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের কম ডোজেই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে কম ডোজে রোগটি কন্ট্রোল না হলে অনেকের ক্ষেত্রে রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডোজ বাড়াতে হয়, এমনকি গুটিকয়েক রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণে এমনকি একাধিক ওষুধের ম্যাক্সিমাম ডোজের প্রয়োজন হয়। ২-৪ বছর নিয়মিত ওষুধ খেলে মৃগী রোগ সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, প্রেসার, হাঁপানি ইত্যাদি রোগের মতো মৃগী রোগের ওষুধও নিয়মিত খেযে যেতে হয়। এতে রোগী উপসর্গহীনভাবে সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ যাতে বন্ধ করা যাবে না ।
লেখক: কনসালটেন্ট, নিউরোমেডিসিন, আজগর আলী হাসপাতাল, ঢাকা।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"