Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

ভারতীয়রা দালালের ‘খপ্পরে পড়ে’ ঠায় হলো ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে

  ইন্ডিয়ার গুজরাট রাজ্যের ছেলে হলেন হেমাল অশ্বিনভাই। এখন তিনি ইউক্রেনের একটি হামলায় জীবন হারিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার পক্ষে লড়তে ইউক্রেনে ছিলেন এ...

 

ভারতীয়রা দালালের ‘খপ্পরে পড়ে’ ঠায় হলো ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে


ইন্ডিয়ার গুজরাট রাজ্যের ছেলে হলেন হেমাল অশ্বিনভাই। এখন তিনি ইউক্রেনের একটি হামলায় জীবন হারিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার পক্ষে লড়তে ইউক্রেনে ছিলেন একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অংশগ্রহণ করে। হেমালকে শুধুমাত্র নয়, বরং অনেক অন্যান্য ভারতীয়  ইউক্রেনিয়ান সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করছেন।


হেমাল অশ্বিনভাইর মৃত্যুর সংবাদ গত সপ্তাহে ভারতীয় মিডিয়া দ্য হিন্দু প্রকাশ করেছিল। এরপরে তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাবার সঙ্গে বিবিসির এক অন্তর্নিহিত সাক্ষাৎকারে অংশ নেন। তিনি বলেন, তিনি একবারই ছেলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন। হেমালকে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ২০–২২ কিলোমিটার ভেতরে মোতায়েন করা হয়েছিল। মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এলেই বাবাকে ফোন করতেন তিনি।


হেমালের মতোই প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য তাদের পরিবার ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধ করেছে। এই পরিবারগুলো বলেছে যে, তাদের ইউক্রেনে লড়তে যাওয়া সব সদস্যের বয়স ২২ থেকে ৩১ বছরের মধ্যে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে সহায়তার কথা বলে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারপর তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে যুদ্ধের মাঠে পাঠানো হয়েছিল।


রাশিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন ভারতীয় উৎস জানিয়েছে যে, একাধিক ভারতীয় নাগরিক রাশিয়ান বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে প্রায় ১০০ জনকে তারা নিয়োগ দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাটি স্বীকার করে এবং বলেছে যে, রাশিয়ান সামরিক বাহিনীকে সহায়তার জন্য কিছু ভারতীয়কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।


ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, এ–সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলি মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের দৃষ্টিতে প্রকাশ্যে আনা  হয়েছে এবং এগুলি রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে শক্তিশালীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রুশ দূতাবাসের প্রতি এই বিষয়গুলি তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। তারাও তাদের সহায়তা অনুমোদন করেছে।


এদিকে, দালালদের কয়েকজনের আত্মবিশ্বাসের ভিডিও দেখা গেছে। তারা তাদের কীভাবে ফাঁদে পড়েছিলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে কীভাবে যাত্রা করেছিলেন তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এই ঘটনায় তাদের পরিবারগুলো বড় ক্ষতি হয়েছে। এই পরিবারগুলো অন্যত্রের অন্যত্র শ্রেণির মানুষ। তারা অটোরিকশা চালায়, চা বিক্রি করে, অথবা ঠেলাগাড়িতে পণ্য বিক্রি করে জীবনযাপন করে।


ভারতীয়রা দালালের ‘খপ্পরে পড়ে’ ঠায় হলো ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে


রুশ বাহিনীতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের এবং তাদের পরিবারের অভিযোগ করা হয়েছে যে, সামরিক বাহিনীর  কাজে কয়েক মাস পরে তাদের রুশ পাসপোর্ট প্রাপ্তির বিষয়ে দালালরা  তাদের লোভ দেখিয়েছিল। তাদের প্রাপ্তির বিনিময়ে তারা ৩ লাখ রুপি অর্জন করেছিলেন। ভারতের বাইরে দালালদের দ্বারা সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন দেশ যেমন,  সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ব্যক্তিদের। এই ব্যক্তিদের প্রাপ্তির জন্য কেউ কেউ প্রাপ্তির বিনিময়ে ১২ লাখ রুপি অর্জন করেছেন। 


একজন ভারতীয় পিতার কান্না ভরা গল্প সহ বিবিসির সাথে কথা বলে গেলেন।  কর্ণাটক রাজ্যে চা ও ডিম বিক্রেতা তিনি। বলেন, "আমার ২৮ বছর বয়সী ছেলে দুবাইতে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। সেখানে সে ও তার তিন বন্ধু একজন দালালের ভিডিও দেখেছিল। তাতে ওই দালাল রাশিয়ায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ রুপি বেতনের চাকরির কথা বলেছিলেন। সে সময় আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা দুবাইতে বেতন পেত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রুপি। রাশিয়া যেতে তারা ঋণ করে ওই দালালকে ৩ লাখ রুপি দিয়েছিল। দয়া করে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন।


কর্ণাটকের  বাবার বক্তব্য সাথে সংযুক্ত হয় ভারতের তেলেঙ্গানা, গুজরাট, কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, এবং উত্তর প্রদেশে দালাল চক্রের অনেক অপরাধের ঘটনা। জানুয়ারি মাসে, একটি গোপন ভিডিওতে একজন উত্তর প্রদেশ বাসী বলেছিলেন যে, ‘বাবাভ্লগ’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের পরিচালকরা তাঁদের রাশিয়ায় নিয়ে গিয়েছেন। ওই চ্যানেলটি একজন ভারতীয় পরিচালনা করেন। তাঁদের প্রতি মাসে দেড় লাখ রুপির বেতনের কাজের পদে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তবে কোনও তথ্য নেই যে রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে তাদের পাঠানো হবে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিজ্ঞাপন দেখে, অনেক অপরাধের ফাঁদে পড়েছিল আরও এক উত্তর প্রদেশি ব্যক্তিও। একটি ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন যে, মস্কোয় তারা রাশিয়ান ভাষায় লেখা একটি চুক্তিতে সই করেছিল। এরপর ইচ্ছা না থাকা সম্প্রতি তাদের যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল। তাদের সঙ্গে অনেক প্রতারণা ঘটেছে যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন আরো দুই ভারতীয় ব্যক্তির। তাদের জন্য যুদ্ধে কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না।


কাশ্মীরের আরেক বাসিন্দা ইউক্রেনে যুদ্ধে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে আহত হয়েছেন। মারিওপোলের প্রশিক্ষণে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও একজন ভারতীয় এবং নেপাল ও কিউবার ৯ জন নাগরিক। রাশিয়া–ইউক্রেন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মুঠোফোনে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কমান্ডার বলতেই থাকতেন, ডান হাত দিয়ে গুলি করো, বাঁ হাত দিয়ে গুলি করো, ওপরে গুলি করো, নিচে গুলি করো। এর আগে আমি কখনোই বন্দুক ধরিনি। সেখানে খুবই ঠান্ডা ছিল। আর বাঁ হাতে বন্দুক ধরা অবস্থায় শেষ পর্যন্ত আমার পায়ে গুলি করে ফেলি।


ভারতীয়দের রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রথম তোলেন হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। ওই সব ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন। এরপরই বিষয়টি সংবাদের শিরোনাম হয়।


এই বিষয়ে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রধান মল্লিকার্জুন খাগড়ে বলেছিলেন যে, গত বছরে সহযোগী হিসেবে প্রায় ১০০ ভারতীয়কে রুশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের অনেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে লড়তে হয়েছে। তারা যেন দেশে ফিরতে না পারেন, এর জন্য অনেকের পাসপোর্ট ও নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনাটি চমকে দেওয়ার মতো।


২০২২ সালে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করার পর বেশ কয়েকজন ভারতীয় ইউক্রেন বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। তবে রুশ বাহিনীতে ভারতীয়দের উপস্থিতির খবর এই প্রথম সামনে এলো। এ নিয়ে রাশিয়ায় বসবাস করা এক ভারতীয়র সঙ্গে কথা হয়েছে বিবিসির। একসময় তিনি রুশ বাহিনীতে ছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, রুশ সামরিক বাহিনী খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে। বিভিন্ন চুক্তির তথ্যও অনলাইনে প্রকাশ করে তারা। যাঁরা রাশিয়া সম্পর্কে জানেন না, তাঁরাই দালালদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।



সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "