মনোনয়ন–বিতণ্ডায় ৩২ বছর পর নির্বাচনে নেই জাতীয় পার্টির (জাপা) ৮০ বছর বয়সী জ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদ। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে রওশন অধ্যায়ের শেষ...
মনোনয়ন–বিতণ্ডায় ৩২ বছর পর নির্বাচনে নেই জাতীয় পার্টির (জাপা) ৮০ বছর বয়সী জ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদ। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে রওশন অধ্যায়ের শেষ কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে দলে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমনিতেই বার্ধক্য ও অসুস্থতায় ভুগছেন রওশন এরশাদ। এবার দলের কিছু আসনে মনোনয়ন প্রশ্নে ‘অভিমান’ থেকে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রার্থী হননি তিনি। পাঁচ বছর পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে। তখন রওশনের বয়স হবে ৮৫ বছর। সেই পর্যন্ত রওশন রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় থাকতে পারবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে, বিশেষ করে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ সংশয় রয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখানেই রওশনের রাজনৈতিক পর্বের শেষ দেখছেন।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল শুক্রবার রাতে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে তিনি (রওশন এরশাদ) পার্টিতে কোনো ভূমিকায় ছিলেন না। শুধু সংসদে থাকতেন। সবারই কিন্তু রাজনীতিতে সমাপ্তির একটা সময় আসে। আমার মনে হয়, ওনার সে সময় এসেছে।’
তবে জাপার দায়িত্বশীল নেতারা জানান, হঠাৎ রওশন এরশাদ এভাবে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যাবেন, সেটি অনেকেই ভাবতে পারেননি। আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় রওশনের অনেক অনুসারীর রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রওশনকে সামনে রেখে যাঁরা দলে বিভক্তি সৃষ্টিসহ জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমাসহ ব্যক্তিগত বিরোধে জড়িয়েছেন, ভবিষ্যতে তাঁদের কী হবে। তাঁদের মধ্যে রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদও নির্বাচনপ্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়েছেন। তিনি রংপুর–৩ নির্বাচনী আসন নিয়ে জাপার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। ফলে সামনে জাপার রাজনীতিতেও তাঁর অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
অবশ্য মুজিবুল হক বলেন, ‘সাদ জাপার যুগ্ম মহাসচিবদের একজন। সাদ যদি পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব মেনে রাজনীতি করতে চান, করতে পারেন। এখানে তো কোনো সমস্যা দেখি না।’
দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করছেন, রওশন ও ছেলে সাদসহ অনুসারীদের একটি অংশ নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ায় জাপায় কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে না। তাঁদের যুক্তি, রওশন এরশাদকে ঘিরে যারা এত দিন জাপার নামে ভিন্ন তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সাদ এরশাদ ছাড়া অন্যরা কেউ দলের সদস্য নন। তাঁদের মধ্যে জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ ও জাপার চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা জিয়াউল হক মৃধা, দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনূর রশীদ ও ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু উল্লেখযোগ্য। তাঁদের মধ্যে মসিউর রহমান, গোলাম মসীহ ও জিয়াউল হক মৃধা বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন; আর কাজী মামুন ও ইকবাল হোসেন এখন দলে নেই।
রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, ‘তাঁর (রওশন) রাজনৈতিক অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে মনে করি না। তবে হ্যাঁ, এক অর্থে বলতে পারেন, তাঁর বয়সের কারণে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গেছেন। আমরা আশা করছি, আবার আমরা নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াব তাঁর নেতৃত্বে।’
জাপায় আগে থেকে এইচ এম এরশাদ ও বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে দুটি ধারা ছিল। এরশাদের কাছে যাঁরা গুরুত্ব পেতেন না, তাঁরা রওশনের পক্ষ নিয়ে সুবিধা নিতেন। এরশাদের মৃত্যুর পরে সে ধারাটি আরও জোরদার হয়। এর প্রকাশ ঘটে হঠাৎ রওশনের জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বানের মধ্য দিয়ে। এরপর রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে জাপার সংসদীয় দলের আবেদন ও পাল্টা আবেদনের মাধ্যমে দলের ভেতরকার দ্বিধাবিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যকার দুটি ধারা এত দিন চলে আসছিল। তবে এবার দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সে ধারা ভেঙে একতরফা হয়ে যায়। ফলে বয়স, বার্ধক্য ও অসুস্থতা—সব মিলিয়ে রওশনের রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো কি না, দলের ভেতরে–বাইরে সে প্রশ্ন উঠেছে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"